1. admin@esomoy.com : admin :
বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

জাজিরা হাসপাতালে সেবার মান হতাশাজনক

জিহাদ কাজী
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩
  • ১৩৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোটার:

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ডাক্তার না থাকা, কক্ষ তালাবন্ধ ছাড়া নানা রকম তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার সেবা প্রত্যাশীরা। প্রশ্নের জবাবে দায়িত্বরত কর্মকর্তার দায়সারা উত্তরে স্বাস্থ্য সেবার মানে হতাশ এলাকাবাসী।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েক দিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ডাক্তারদের কর্মস্থলে অনিয়মত, নির্ধারিত সময়ের আগেই ডাক্তাদের হাসপাতাল ত্যাগ করার মত নানা অভিযোগের সত্যতা।
অনুসন্ধানের বিগত দিনগুলোর মতই শনিবার (২০ মার্চ) হাসপাতালে গিয়ে দেখা মিললো দুই সেবা প্রত্যাশীকে। যারা সকাল ১১ টা থেকে ফাইল হাতে ঘুরছে টেবিলের পর টেবিলে।

কথা বলে জানা গেলো তাদের একজন পলাশ শেখ (২৮) অপরজন জিহাদ কাজী (২৪) উভয়ই জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। এরা দুইজন বিআরটিএ নির্ধারিত ফর্মে মেডিকেল সার্টিফিকেটে বা সনদপত্র নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান, যেটি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলে দরকার । প্রথমে তারা ২২৩ নাম্বার কক্ষে গিয়ে ঘুরে আসে ডঃ রোমান বাদশার সাথে কথা বলে। তখন ডাক্তার পরামর্শ দেয় যেনো ফর্মটি সে নিজে পূরণ করে আনে, যেখানে নিয়ম অনুযায়ী ডাক্তার নিজে প্রার্থীর শারীরিক অবস্থা নিশ্চিত হয়ে নিজ হাতে সেগুলো পূরণ করা সনদটি প্রদান করবেন। তখন সেবা প্রত্যাশী পলাশ শেখ আবার চলে যায় ব্যাংক মোড় একটি কম্পিউটারের দোকানে, সেখান থেকে একজনের সহায়তায় সবগুলো পূরণ করে আনে।

এসে দেখে ডঃ রোমান বাদশা ততক্ষণে হাসপাতাল ত্যাগ করেছে,ঘড়িতে তখন ১২.১০। এরপর ডঃ রোমান বাদশাকে কয়েকবার তার ব্যক্তিগত নাম্বারে কল দেয়া হলেও কল রিসিভ করেনি। তখন সেটা নিয়ে ভুক্তভোগী হাসপাতালের এক অফিস সহকারীর পরামর্শে চলে যায় ২১৮ নাম্বার রুমে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান তালাবন্ধ ২১৮ নাম্বার রুমটি। এরপূর্বে ২১৫ তে ডাক্তার থাকলেও ঘড়িতে যখন ১২ তাখন ১৬ বাদে কোন রুমেই দেখা মিলেনি কোন দ্বায়ীত্বরত চিকিৎসকের। ২১৬ নাম্বারে রোগী দেখছিলেন ডঃ বাঁধন। তাকে এই সনদটি বা ফর্মটি করে দিতে বললে তিনি অজুহাত দেন তার কাছে নিজের সিল নেই। যার কারণে সে এটা দিতে পারবেন না।

এসময়ে তিনি সেবা প্রত্যাশী পলাশ শেখ ও জিহাদ কাজীকে রোহিঙ্গাদের সাথে তুলনা করে বলেন, এখানে তো অনেক রোহিঙ্গাও চলে আসে, আমি বুঝব কিভাবে কে আপনি, আপনাকে তো আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনিনা।

তবে নিয়ম বলছে ভিন্ন কথা-একজন চিকিৎসক যখন একটি সনদ কোন সেবা প্রত্যাশীকে দেন তখন সে প্রদানকৃত ছবির সাথে সেবাপ্রত্যাশীর জাতীয় পরিচয় পত্র এবং স্বশরীরে উপস্থিত থাকা ব্যক্তি চেহারার মিল পেলে তারপর সেটি ইস্যু করে থাকে। যেখানে একজন রোহিঙ্গার কাছে কখনই জাতীয় পরিচয় পত্র থাকার কোন সুযোগ নেই। এখানে ডঃ বাঁধনের কথাটি তাদের সেবা নিতে গিয়ে অত্ম সম্মানহানীকর বলে মনে করছেন পলাশ শেখ ও জিহাদ কাজী।এরপর একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে অভিযোগ নিয়ে চলে যায় জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহামুদুল হাসান এর কক্ষে সেখানেও নানা তালবাহানার পর দেয়া হয় প্রত্যায়ন বা সনদ।
এদিকে হাসপাতালের ২য় তলায় চিকিৎসকের রুমের সামনে এক্সরে রিপোর্ট হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় শবানা বেগম কে (৩৫), তিনি জানান তার ছোট বোন হাসপাতালের ইনডোরে ভর্তি আছেন।বোনের পা ভাঙ্গার রিপোর্ট দেখানোর জন্য শবানাকে ২১৬ নাম্বার রুমে পাঠিয়েছে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড থেকে, তবে ১ টা বাজার আগেই খালি হয়ে গেছে উপজেলা কেন্দ্রে অবস্থিত চিকিৎসকের সবগুলো কক্ষ ফাঁকা হয়ে গেছে।
এবিষয়ে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহামুদুল হাসান বলেন- চিকিৎসকদের অফিস টাইম দুপুর ২.৩০ পর্যন্ত, তবে রোগী না থাকলে ডাক্তারা মাঝেমধ্যে আগে চলে যান।

এদিকে জাজিরা হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক ডাঃ শায়লা নাজনীন ও এ্যনেস্থেসিয়া ডাঃ সালাউদ্দিনের অনুপস্থিতির কারনে দীর্ঘ  প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ হয়ে গেছে মাতৃসেবা ও গাইনি চিকিৎসা এবং সিজারিয়ান সেবা কার্যক্রম।
ডঃ বাধন জানান, ডঃ শায়লা নাজনীন কোন কোন সপ্তাহে একদিন আবার কোন কোন সপ্তাহে দুইদিন আসে। এর সত্যতা নিশ্চিত করেন জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহামুদুল হাসান।

তিনি জানান “ডঃ শায়লা নাজনীন এর অনুপস্থিতি নিয়ে আমি অনেকবার তাকে বলেছি, সে শোনেনি।  এরপর তাকে লিখিত ভাবে তাকে নোটিশ পাঠান হয়েছে বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি,তার বেতন ভাতা বন্ধ রাখছি, এখান সেখানে যদি সে এরপরও নিয়মিত না হয় সেখানে আমাদের কি করনীয় আছে”।জাজিরার মত একটি মফস্বল এলাকায় যেখানে আশপাশে ভালোমানের কোন প্রাইভেট ক্লিনিক পর্যন্ত নেই সেখানে ডাক্তারদের সেবা দানে এমন অনিচ্ছুক হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডঃ মাহামুদুল হাসান জানান ” সারা বাংলাদেশেই ডাক্তাররা বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলে আর উপজেলায় বসতে চায়না। ডাক্তারদের তখন অল্প বেতনে হয় না।তাদের পরিবারের ডিমান্ড আছে।তার ভালো একটা ফ্লাট দরকার হয়, ভালো একটা গাড়ি দরকার হয়।তার ইনকাম হয়না উপজেলায় বসলে।”
এবিষয়ে ডঃ শায়লা নাজনিন শনিবার হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: FT It