1. admin@esomoy.com : admin :
বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৪ অপরাহ্ন

ড্রেনে ফেলা হচ্ছে সৈয়দপুর পৌরসভার পয়ঃবর্জ্য

মোঃ জাকির হোসেন
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩
  • ১১৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে

নীলফামারী প্রতিনিধি:
আমেরিকা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটার এইড এর অর্থায়নে ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত বিশালাকৃতির শোধনাগার থাকতেও বাসা-বাড়ি থেকে সংগৃহীত পয়:বর্জ্য ড্রেনে ফেলছে স্বয়ং পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার পরিবর্তে ব্যাপক দূষণে নিমজ্জিত। দূর্গন্ধ ছড়িয়ে জনভোগান্তি সৃষ্টি করছে আর বর্জ্য শোধনাগারটিকে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে। অভিযোগ রয়েছে শোধনাগারের ভ্যাকুট্যাক ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ পকেটস্থ করতে একটি সিন্ডিকেটের প্রশ্রয়ে এমনটা ঘটছে। ফলে পৌর পরিষদসহ তদারকি সংস্থার দায়িত্ব প্রাপ্তরা নির্বিকার থাকায় ক্রমেই এই অবস্থা আরও প্রকট হচ্ছে। নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার হিউম্যান ফেসকল ট্রিটমেন্ট প্লান্টে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে বুধবার (১০ মে) সকাল ৭ টায় শহরের নতুনবাজার সুরকি মহল্লার ভাগার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ওই প্লান্টে গিয়ে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেটের সামনেই একটি ভ্যাকুট্যাক থেকে মানববর্জ্য (মলমূত্র) বাহিরের ড্রেনে ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন বাসা বাড়ির টয়লেটের সেপটি ট্যাংক থেকে সংগ্রহ করা এসব বর্জ্য ট্রিটমেন্টের (শোধনের) জন্য প্লান্টের ভিতরে পন্ডে না দিয়ে এখানে উম্মুক্ত জায়গায় কেন ফেলছেন জানতে চাইলে ভ্যাকুট্যাক চালক সানু বলেন, গেটবন্ধ এবং লোকজনও নাই তাই ড্রেনেই ফেলছি। মাঝে মাঝেই এমনটা করতে হয়।

এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগ বেশ কিছুদিন থেকে নিয়মিত ড্রেনেই এসব বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে সকালের দিকেই একাজ করছে সংশ্লিষ্টরা। এতে এপথে চলাচল দূরহ হয়ে পড়েছে। তার উপর চলতি মাসের প্রচণ্ড রোদ ও তাপে খোলা জায়গার এই ময়লা আরও পঁচনে অসহনীয় দূর্গন্ধে চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে আশেপাশের এলাকা। প্লান্টে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ রোধের পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে বসেছে। ফলে কথা উঠেছে প্লান্ট যেন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রমতে, একটি সিন্ডিকেট চালককে দিয়ে কিছু কিছু টয়লেটের বর্জ্য সংগ্রহ করে সার্ভিস চার্জের টাকা নিজেরা পকেটস্থ করতে প্লান্টের বাইরে গোপনে ড্রেন বা অন্যকোন খোলা জায়গায় ফেলছে। এতে পৌরসভার রেজিষ্টারে এসংক্রান্ত তথ্য যেমন থাকছেনা তেমনি পৌর একাউন্টে কোন অর্থও জমা হচ্ছেনা। এভাবে দিনের পর দিন চলছে। আয়কৃত অর্থ চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যদের হাতে। ফলে বৈধ রাজস্ব হারাচ্ছে পৌরসভা।

পৌরসভার সচিব সাইদুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, প্লান্টের পন্ডসগুলো উপচে গেছে তাই সংগৃহীত বর্জ্য অন্যত্র মজুদের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারপরও ড্রেনে ফেলা ঠিক হয়নি। বিষয়টি দেখছি। তিনি আরও বলেন, প্লান্ট তদারকি কর্মচারীরা সময়মত না থাকায় হয়তো ড্রেনে ফেলেছে। তবে মেয়রের সাথে দেখা করলে ভালো হয়। তিনিই এবিষয়ে সঠিক বলতে পারবেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, কোনভাবে পয়ঃবর্জ্য উম্মুক্ত স্থানে ফেলা যাবেনা। এতে পরিবেশ দূষণ ঘটবে। আমাদের অগোচরে হয়তো এমনটা হয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিক খোঁজখবর নেন এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি করেন। এতে ইনচার্জ সামাদ ড্রাইভার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

তদারকি সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের সৈয়দপুর শাখা ম্যানেজার নজরুল ইসলাম তফাদার বলেন, বর্জ্য যদি বাইরে কোথাও ফেলা হয় তা পৌরসভার দায়। আমাদের প্লান্টে কোন সমস্যা নাই। তারপরও কেন বাইরে ফেলছে তা আমরা জানিনা। দিনরাত ২৪ ঘন্টায় ৩ জন কেয়ারটেকার নিয়োজিত। গেট বন্ধ থাকার অভিযোগ সঠিক নয়। আর যদি বন্ধও থাকতো তাহলে মোবাইলে আমাদের বা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল। তা না করে মিথ্যে অজুহাতে ড্রেনে ফেলায় বিষয়টি গোঁজামিল বলেই মনে হচ্ছে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এব্যাপারে পৌর মেয়রের মন্তব্য জানতে পৌরসভায় গেলে মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী মিটিংয়ে আছে অজুহাতে সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে যান। অথচ তিনি তাঁর কার্যালয়ে একাকি অবস্থান করছিলেন। পরে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক জিয়া বলেন, সাবেক মেয়র মরহুম অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ওয়াটার এইডের অর্থ সহায়তায় ও এসকেএস ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে এই প্লান্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি দেখতে ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, এমপি, সচিবরা এসেছিল। যাতে তারাও এমন প্লান্ট করতে পারে।

তিনি বলেন, প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই শোধনাগার সৈয়দপুরের সম্পদ। এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন মানববর্জ্যের কুফল থেকে পরিবেশ রক্ষা করা যাবে তেমনি এথেকে উৎপাদিত জৈবসার কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটাবে।  পাশাপাশি পৌরসভার আয়ও হবে। অথচ এটা রেখে উম্মুক্তস্থানে মানববর্জ্য ফেলে দূষণ ঘটানো অবিবেচনা প্রসূত কাজ।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: FT It