নরসিংদী প্রতিনিধিঃ মানুষের জীবনের পূর্ণাঙ্গ পরিনতি হয় বিয়ের মাধ্যমে।ছেলেমেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলেই মা বাবার একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে তাদের বিয়ে দেওয়া। কিন্ত বর্তমান সমাজের একটি মহামারি রোগ যেনো যৌতুক প্রথা। যেখানে বিয়ের কথা ওঠার প্রথম প্রস্তাব হয় যৌতুক নিয়ে।
যার কারণে গরিব বা মধ্যবিত্ত পরিবারে যখন একটি কন্যাসন্তান জম্ম নেয় তখনই মা বাবা চিন্তিত হয়ে পড়ে।শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য যে,বর্তমান সমাজে বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েরা যেনো হাটে বিক্রি করতে যাওয়া পশুর মত।যেখানে গবাদি পশুর মতই দামাদামির স্বীকার হয় মেয়েদের জন্য তার বর।
আমাদের সমাজে দেখা যায় নারীদের তেমন মূল্যায়ন করা হয়না।তার পিছনেও এই ভয়ংকর যৌতুক প্রথা দায়ী।যেখানে একটি গরিব বাবা তার কন্যা সন্তানটির ভরণপোষন করানো পর্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে তার উপর যদি থাকে সেই মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে ভারি যৌতুকের আশংকা তাহলে সেই মেয়ের প্রতি তো বিরক্তি আসা স্বাভাবিক।
আবার অনেক সময় দেখা যায়,একজন মেয়েকে অনেক কষ্ট করে বিয়ে দেওয়ার পরও তার শশুড়বাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হয় আরো যৌতুকের জন্য।নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয় মেয়েরা।যৌতুকের জন্য শারিরিক,মানষিক নির্যাতনের ঘটনা এখন আমাদের সমাজে অহরহ ই ঘটছে।
অনেক সময় দেখা যায়,যৌতুকের জন্য নির্যাতনের এক পর্যায়ে,মেয়েটির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে।আবার দেখা যায়,মানষিক, শারিরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে মেয়েরা।অনেক মেয়ের ডিভোর্সের কারণও হয় এই যৌতুক।বর্তমানে পুরুষশাসিত এই সমাজে মনে হচ্ছে মেয়েরা প্রানবন্ত মানুষ নয়,যেনো কোনো বাজারের পন্য।যাদের শশুড়বাড়ির কদর নির্ভর করে মা বাবার দেওয়া যৌতুকের পরিমাণের উপর।
এই যৌতুকপ্রথা শুধু একটি মেয়ের সুন্দর জীবন ই নষ্ট করছেনা।নষ্ট করছে একটি পরিবার।ধ্বংস করছে সমাজের শৃঙ্খলা,সৌন্দর্য্য,মেয়ের বরের যৌতুকের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার।তারপরেও শশুড়বাড়িতে লান্ঞ্চিত হচ্ছে মেয়েরা।একটি মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার প্রধান শর্ত যখন থাকছে যৌতুক তখন সমাজ সেই নারীকে অপমান আর অবহেলার চোঁখে দেখবে এটা ই স্বাভাবিক নয় কি??
নারীদের এত লান্ঞ্চণা, বন্ঞ্চণা,নির্যাতন,অবহেলা,আর নিপীড়নের প্রধান কারণ ই হচ্ছে এই যৌতুকপ্রথা।যতদিন এই সমাজ থেকে ঘৃনিত যৌতুকপ্রথা বিদায় না করা যাচ্ছে ততদিন এখানে নারী নির্যাতন দূর করা এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার চিন্তা ভাবনা করা অলিক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।
যৌতুক প্রথার এমন অধিক প্রসার এবং অাধিপত্য বিস্তারের প্রধান কারণ হচ্ছে আইনের সুষ্ঠু এবং সঠিক প্রয়োগ না হওয়া।এই ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিকে প্রতিরোধ করতে হলে প্রশাসন এবং নাগরিকদের একত্রে কাজ করতে হবে।সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রয়োজনে আরো কঠোর হতে হবে।
যৌতুক দূরীকরণে আইনের প্রয়োগে বিন্দুমাত্র ছাড় নয়।আমাদের দেশের আইনের সঠিক প্রয়োগ না করাও এই যৌতুক প্রথার বিস্তারের জন্য দায়ী।
যৌতুক প্রথা দূরীকরণে আইনের সঠিক প্রয়োগের বিকল্প নেই।
এস এম /এসময়
Leave a Reply