শ্রমিকদের দাবি মানায় খুলেছে উত্তরা ইপিজেড।   

নাজমুল হুদা, স্টাফ রিপোর্টারঃ  

শ্রমিকদের ২৩ দফা দাবি মেনে নিয়ে দুই দিন বন্ধের পর আবারো খুলেছে উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)' র কারখানাগুলো। বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেয়। তবে পরচুলা তৈরীর কারখানা এভারগ্রিন খুলবে শনিবার। এভারগ্রিন কারখানার শ্রমিক ছাঁটাই ও পরবর্তীতে বন্ধ ঘোষণার জেরে গত মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে হাবিব (২১) নামের এক শ্রমিক নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হন। ওই ঘটনায় গত বুধবার ইপিজেডের সব কারখানা বন্ধ ছিল। বুধবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত শ্রমিক প্রতিনিধি, কারখানা মালিক, বেপজা , জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে বৃহস্পতিবার থেকে ইপিজেডের কারখানা গুলো খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে উত্তরা ইপিজেড এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুল জব্বার বলেন, 'এভারগ্রিন  নামে যে কারখানাটি থেকে শ্রমিক অসন্তোষ এর ঘটনা ঘটে, সেটি ছাড়া বাকি ২৬ টি কারখানা খুলেছে। শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। এভারগ্রিনের কারখানা আগামী শনিবার খুলবে।' তিনি জানান ইপিজেডে বর্তমানে ২৭ টি কারখানায় প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত। এছাড়া আরো ছয়টি কারখানা উৎপাদনে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় ইপিজেড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও হেঁটে দলে দলে ইপিজেডের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকছেন। নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন। ম্যাজেন কোম্পানির শ্রমিক বাবলি আক্তার বলেন, দুদিন বন্ধ থাকার পর আজ কারখানা খুলেছে। কাজে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। ভ্যানচুরা কোম্পানির দুলাল হোসেন বলেন, কাজ না করলে মজুরি হবে না খাবো কি ? তাই দ্রুত কারখানা চালু হওয়ায় আমরা খুশি। এভারগ্রিন কারখানায় সম্প্রতি ৫১ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এ ঘটনায় তিন দিন ধরে কারখানায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন- ভাতা না দিয়ে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে ইপিজেডের প্রধান ফটকে নোটিশ টাঙিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকেরা ভেতরে ঢুকতে না পেরে ইপিজেডের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে গেলে উত্তেজিত শ্রমিকেরা তাঁদের ওপর চড়াও হন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শ্রমিক হাবিব নিহত হন। তিনি ইকুয়ান ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি নিটিং কারখানায় কর্মরত ছিলেন। নিহত হাবিব জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট মাছিরচাক গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে। সংঘর্ষের ঘটনায় বেপজার পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে। নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কারখানার শ্রমিকেরা আজ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।