রাজশাহী ব্যুরো :দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’ তৈরি করা হয়েছে রাজশাহীতে। দেশের সর্বাধুনিক এ নভোথিয়েটার উন্মুক্ত হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে হন্তান্তর করা হবে যে কোনো দিন।
রাজশাহীর গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ২৩২ কেটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার রাজশাহীর শহীদ কামাররুজ্জামান উদ্যানের সামনে নির্মাণ শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে যেমন- করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কাটিয়ে যার কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জুলাইয়ে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ধোয়া-মোছার কাজ।
দেশের সর্ববৃহৎ পরিধির এ স্থাপনায় থাকছে প্ল্যানেটেরিয়ামসহ ফাইভ-জি হল ও আধুনিক অবজারবেটেড টেলিস্কোপ, যা দেশে প্রথম। আগামী সেপ্টেম্বরে রাজশাহীর এ নভোথিয়েটার উদ্বোধনের কথা জানান কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী গণপূর্ত- ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ জানান, প্রকল্পে শুধু ভবন তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১৪০ কেটি টাকা। বাকি অর্থ ব্যয় হয়েছে নভোথিয়েটারের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য খাতে। শুধু প্ল্যানেটেরিয়াম ছাড়াও এখানে রয়েছে বিশাল জায়গা। যে কোনো বিজ্ঞান প্রদর্শনী ছাড়াও চাইলে শিক্ষা বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান এখানে করা সম্ভব।
তিনি বলেন, স্থাপন করা হচ্ছে বিশ্বের আধুনিক টেলিস্কোপ, যা দিয়ে গবেষকরা নভোমÐলের গবেষণা আরোও এগিয়ে নিতে পারবেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি গণপূর্ত অধিদপ্তর যথাযথ গুণগতমান বজায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক ডেকোরেশন। লাইটিং, ভবনের সম্মুখে সুদৃশ্য পানির ফোয়ারা। পুরো ভবনে সেন্ট্রাল এসি স্থাপন, টিকিটিং সিস্টেম পুরোপুরি অটোমেটেড ও ডিজিটাল। আধুনিক ফায়ার প্রটেকশন ও ডিটেকশন ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতে লাগানো হয়েছে ১৪০টিরও বেশি সিসি ক্যামেরা।
দর্শনার্থীদের জন্য আরোও থাকছে অন্তত ১০০টি কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ভবন হতে যাচ্ছে এ বিজ্ঞান গবেষণা ও মহাকাশ প্রদর্শনী কেন্দ্রটি। তবে উদ্বোধনের পরদিনে কয়টি শো এখানে চলবে বা টিকিটের দাম কতো হবে, তা এখনো জানানো হয়নি। সেটি ঠিক করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। খুব শিগগির গণপূর্ত বিভাগ এ ভবনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করবে বলে জানান।
নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ আরোও বলেন, আশা করা হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের মূল আকর্ষণ প্ল্যানেটেরিয়ামের কাজ শেষ। চওড়া সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে তিনতলায় যেতে ভেতরে দুটি বড় সিঁড়ি ছাড়াও রয়েছে লিফট ও এস্কেলেটর। তৃতীয় তলায় পূর্ব উত্তর কোনায় বসানো হয়েছে গম্বুজ। কক্ষটিতে প্রবেশ করতে হচ্ছে জুতা খুলে। কারণ ভেতরে খুবই স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মেঝেতে বিছানো হয়েছে মূল্যবান মাদুর। রাখা হয়েছে সারি সারি লাল রঙের আরামদায়ক চেয়ার। কম্পিউটারের মাধ্যমে অপারেট করা হবে এ প্রদর্শনী কেন্দ্রটি।
সফটওয়্যার চালুর সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করলেই গম্বুজের চারপাশ থেকে হালকা আলোতে আলোকিত হলো মাথার ওপরের সাদা পর্দা। চারপাশের মোট পাঁচটি প্রজেক্টর একসঙ্গে চালু হয়ে শুরু হয় দ্য বিগ ব্যাং শো।
অসীম মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি, সূর্য, চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র সবই এক পর্দায় ভেসে উঠছে নিমিষেই। নিখুঁত সাউন্ডের জন্য পুরো হলে লাগানো হয়েছে ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম, যা প্রদর্শনীর মাধ্যমে নিয়ে যাবে সরাসরি মহাশূন্যে গ্রহ-নক্ষত্রের খুব কাছে। একসঙ্গে দেড়শ জন এমন আসনগুলোতে বসে অসীম মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে ও দেখতে পাবেন।
দিনে অন্তত ৬-৭টি শো চালানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে শিশুরা বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী হবে। বিজ্ঞানমনস্করা আধুনিক টেলিস্কোপের মাধ্যমে নভোমÐল প্রত্যক্ষ ও গবেষণায় যুক্ত হতে পারবেন। এমন একটি প্রতিষ্ঠান রাজশাহীতে পেয়ে খুশি বিজ্ঞানপ্রিয়রা।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুল বলেন, এটি অবশ্যই নগরবাসীর জন্য খুবই ভালো সংবাদ। কিন্তু এটি যেন শুধু দর্শনার্থীদের জন্য বিনোদনের কেন্দ্র না হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানটিতে বিজ্ঞান চর্চা, মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনা ও ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply