বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় সরকারি শাহ সুলতান কলেজের ২৫ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার ঘটনায় তিন কর্মচারীকে আটক করেছে র্যাব ও পুলিশ।
শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকালে কলেজ চত্বর থেকে তাদের আটক করা হয়।
আকটকৃতরা হলেন- আমিনুল ইসলাম, হারুন অর রশিদ এবং আব্দুল হান্নান। এদের মধ্যে হারুন এবং আমিনুলকে র্যাব এবং হান্নানকে শাজাহানপুর থানা পুলিশ আটক করেছে।
র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেন এবং শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির চার সদস্য কথা বলেন অভিযুক্ত কর্মচারী, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। এসময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেন কমিটির সদস্যরা।
হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে আগামী ২১ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত শুক্রবার কলেজের পক্ষ থেকেও তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। তারা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
গত বৃহস্পতিবার সরকারি শাহ সুলতান কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে ২৫ শিক্ষার্থী জানতে পারেন উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে তাদের ভর্তিই করানো হয়নি।
ওই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের কর্মচারীদের প্রতারণার কারণে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। প্রায় দুই বছর নিয়মিত ক্লাস করে ১৭ আগস্ট চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার জন্য তারা কলেজে প্রবেশপত্র আনতে যান। তখনই তারা জানতে পারেন যে, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে তাদের ভর্তিই করানো হয়নি। কলেজে কর্মরত হারুনুর রশিদ এবং আব্দুল হান্নান নামে দুই কর্মচারী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
হাবিবুর রহমান নামে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি হারুনের কাছে ১০ হাজার টাকা দিলে তিনি আমাকে কলেজে ভর্তির রশিদ দেন। তারপর আমি কলেজের ইউনিফর্ম বানিয়ে ক্লাস করতে থাকি। পরে পরীক্ষা এবং ফরম পূরণসহ বিভিন্ন সময় কলেজে এবং বোর্ডে জমা দেওয়ার কথা বলে তিনি আরও ৪০ হাজার টাকা নেন।
নিয়মিত ক্লাস করার পাশাপাশি আমি টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেই এবং ফরম পূরণ করি। চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার জন্য প্রবেশপত্র চাইলে তিনি ১৬ আগস্ট সকাল ১০টায় কলেজে যেতে বলেন। তবে ওইদিন কলেজে গেলে তিনি বলেন, প্রবেশপত্র প্রিন্ট হয়নি। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে আনতে হবে। আমি রাজশাহী যাচ্ছি তোমরা বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা কর।’
শারমিন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রবেশপত্র নেওয়ার জন্য হান্নান পরীক্ষার দিন অর্থাৎ ১৭ আগস্ট ভোরে কলেজে যেতে বলেন। তবে সকাল ৬টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেও তাকে কলেজে না পেয়ে ফোন দিলে হান্নান রিসিভ করেননি। পরে আমিসহ অন্যরা পরীক্ষাকেন্দ্র পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে গেলে সেখানে আমাদের কোনো সিট খুঁজে পাইনি। এরপর কলেজে এসে যোগাযোগ করে জানতে পারি আমাদের ভর্তিই করানো হয়নি। ভর্তির রশিদসহ যেসব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছিল সবই জাল ছিল।’
কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজাউন নবী বলেন, ‘কলেজ থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের পর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে বোর্ড থেকেও চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি আজ পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারা তদন্ত করছেন আমাদের কমিটিও তদন্ত করছেন। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলেজের দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে থানায় সোপর্দ করা হবে।’
Leave a Reply