রাজশাহী ব্যুরো : ক্রিপ্টো, বৈদেশিক মুদ্রা, পণ্য, এমনকি বিদেশি স্টক পর্যন্ত নিজের ছায়া প্ল্যাট ফরমেট্রেড করার সুযোগ দিয়ে স¤প্রতি সাড়া জাগানো অ্যাপ এমটি এফই’র ফাঁদে পড়ে নিঃশ্ব হয়েছে রাজশাহীর হাজারো মানুষ। যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বেকার যুবক-যুবতী। তাঁরা চাকরি না পেয়ে ধার-দেনা করে কেউ বা জমি বন্ধক রেখে ওই অ্যাপে টাকা লগ্নি করেন। এখন অনেকের ঘাড়ে জমেছে উল্টো ঋণের বোঝা। এখন সেই ঋণ কিভাবে তারা শোধ করবেন, সেটি নিয়েও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
সব মিলিয়ে রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলার অন্তত ৫ হাজার মানুষ এ অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর এই বিপুল মানুষের নিকট থেকে অন্তত ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি। তবে রাজশাহীর কেউ এর সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা এটি কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
রাজশাহী মহানগরীর লক্ষীপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে তিনি ধার করে ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন এমটিএফইতে। দুই-তিন দিন তিনি টাকাও উত্তোলন করেছেন। সবমিলিয়ে তিনি ১০ হাজার টাকার মতো উত্তোলন করতে পেরেছিলেন। কিন্তু বেশি লাভের আশায় আর টাকা উত্তোলন করে জমাতে থাকছিলেন। আর সেটিই হয়েছে কাল। একপর্যায়ে পুরো অ্যাপসটিই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে লাভ তো দূরের কথা নিজের আসল টাকাটিও তুলতে পারেননি তিনি।
সেলিম বলেন, কোনো কাজ-কাম নাই। তাই এক আত্মীয়ের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে আর নিজের কাছে থাকা ১০ হাজার টাকাসহ সবমিলিয়ে ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম এমটিএফইতে। কিছুদিন পরে দেখি ওই অ্যাপসটি আর কাজ করছে না। কাউকে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগও করতে পারছি না। আবার গ্রামে গিয়ে শুনি আমার মতো শত শত মানুষ এভাবে প্রতারিত হয়েছে। প্রামেই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই অ্যাপসটি। যাঁরা টাকা জমিয়ে ছিলেন, তাদের অধিকাংশই বেকার যুবক-যুবতি।’
রাফিয়া খাতুন নামের শিক্ষার্থী বলেন, ‘অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং বা বাইন্যান্সের মাধ্যমে আমরা টাকা তুলতাম। এক ভাইয়ার মাধ্যমে এই অ্যাপেটাতে কাজ রেছিলাম। কিন্তু পরবর্তিতে টাকা মার যাবে বুঝতে পেরে আমার টাকা আমি তুলে নিয়েছি। ৬-৭ মাস আগে আমি টাকা দিয়িছিলাম। এখন শুনছি, অনেকের টাকা মার গেছে।’
রাজশাহী মহানগরীর অলোকার মোড়ের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি এক লাখ টাকা জমা করে সব টাকা হারিয়েছি। এখন এনজিও’র ঋণ টানতে হচ্ছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ওই টাকা এমটিএইতে জমা করেছিলাম। বেশি লাভ করতে গিয়ে এখন ঘাড়ে ঋণের বোঝা আরও বাড়লো।’
রাজশাহীর পবা এলাকার কলেজ ছাত্র আসগর হোসেন বলেন, ‘বাপের একটা জমি বন্ধক রেখে দেড় লাখ টাকা জমা দিয়েছিলাম। কয়েক দিন কিছু টাকা তুলে বাজার-টাজার করেছি। কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই দেখি গোটা অ্যাপসটাই আর নাই। আমার মতো শত শত যুবক এ ভাবে টাকা দিয়ে নিঃশ্ব হয়েছে।’
Leave a Reply