বিশেষ প্রতিনিধিঃ শরীয়তপুরের জাজিরায় আলোচিত লিটন বেপারী হত্যা মামলায় এগারো জনকে যাবজ্জীবন ও দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. তারিক এজাজ।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর ) দুপুরে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এ রায় প্রদান করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার মো. আমিনুল ইসলাম হিরণ।
মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন -মোকাদ্দেস মোল্লা, মজিবর মাদবর, আওলাদ মাদবর, সুজন মাদবর, , রবুল্লা মাদবর, আব্বাস মাদবর, আব্দুল জলিল খা, এস্কেন্দার মোল্লা, চাঁন মিয়া মাদবর, মকবুল মাদবর ও আল আমিন মাদবর।
এছারাও তিন বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নুরুল আমিন খা আটক রয়েছেন। এক বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মনির মোল্লা এখনো পলাতক। মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে শেষের ছয়জন পলাতক রয়েছেন বলে জানা যায়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২০১০ সালের ৯ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে জাজিরা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের রাড়ীপাড়া গ্রামের শামছুল মাদবরের বাড়ির সামনে জলিল খা, এসকান্দার মোল্লা, চান মিয়া মাদবর গংরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে লিটন বেপারীকে (৩০) গুরুতর আহত করেন। ঘটনার তিন দিন পর লিটন বেপারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত লিটন বেপারী রাড়ীপাড়া এলাকার মৃত আবু সিদ্দিক বেপারীর ছেলে। ঘটনার সময় লিটন বেপারীর স্ত্রী সাবানা ৮ মাসের গর্ববতী ছিলেন।
এ ঘটনায় জাজিরা থানায় লিটন বেপারীর ভাই মতিউর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন । কিন্তু মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আরও দুইজন সহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়। ৩৫ জন আসামির মধ্যে মামলার রায়ে ২২ জনকে খালাস দেন বিজ্ঞ আদালত। এবং ১১ জনকে যাবজ্জীবন ও দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
লিটন বেপারীর হত্যাকাণ্ডের সময় মায়ের গর্ভে থাকা ছেলে জন্মের পর বাবাকে না দেখলেও বাবার হত্যাকারীদের দেখতে আদালত প্রাঙ্গণে এসেছে ১৩ বছরের শিশু রাতুল বেপারী।
শিশু রাতুল বেপারী জানান, জন্মের পর বাবাকে চোখে দেখিনি, বাবা ডাকতে পারিনি, বাবাকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি, বাবার আদর পাইনি। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে জঘন্য ঘৃণা জানাতে এসেছি। আদালত বাবার হত্যাকারীদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। কিন্তু আমি উচ্চ আদালতে বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাইবো।
মামলার বাদী মতিউর রহমান কালবেলাকে জানান, যারা আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে প্রাথমিকভাবে আমরা খুশি। মহামান্য উচ্চ আদালতে যেন এই রায় বহাল থাকে সেই দাবি টুকু জানাই।
এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, লিটন বেপারী ঘটনার তিন দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আদালতের রায়ে আসামিরা সন্তুষ্ট নন। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মির্জা হযরত আলী বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পর আলোচিত লিটন বেপারী হত্যার রায় দিয়েছেন আদালত। মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি। আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলে আমরা এর জবাব দেব।
এস এম /এসময়
Leave a Reply