নীলফামারী প্রতিনিধি: ড্রেনের পানিতে রাস্তা জবুথবু, ঢুকছে বাড়িতে। আর মলের পোকাগুলো উঠছে বিছানায়। রাস্তায় যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়। স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের হাটাচলা মুশকিল। যে ওয়াদা করে কাউন্সিলর ভোট চেয়েছিলেন তার ধারে কাছেও নেই তিনি। কোন উন্নয়ন কাজ দূরের কথা রুটিন ওয়ার্কও নেই এলাকায়। সাথে নানা দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন। এমন নানামুখী সমস্যায় ভুক্তভোগী নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডবাসী।
দীর্ঘদিনের এহেন দূর্ভোগের প্রতিবাদে ওয়ার্ডের কাজীপাড়া, কাজিহাট ও হাওয়ালদারপাড়া এই তিন এলাকার মানুষ রাস্তায় নেমে করেছেন মানববন্ধন। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনটি পৌর সবজি বাজার থেকে শুরু করে নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। এতে নারী পুরুষ শিশুসহ সর্বস্তরের এলাকাবাসী অংশ নেয়। অনেক মায়েরা তাঁদের শিশুদের নিয়ে দাঁড়ান। জানান ক্ষোভ, করেন প্রতিবাদ, চান প্রতিকার এবং দিয়েছেন আল্টিমেটাম।
মো. খালিদ এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, ময়জুল হাসান, লাডলে, মো. সাহিদ আত্তারি, সনু ইসলাম, রাশেদ খান জাম্বু, খালিদ খান। মহিলাদের মধ্যে সোনি, বেবি লাডলীসহ ভুক্তভোগী আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, আমরা এলাকাবাসী আজ অসহায়। পৌর টেক্স ঠিকই আদায় করা হচ্ছে কিন্তু বিন্দুমাত্র নাগরিক সুবিধা পাচ্ছি না। মূল রাস্তায় ময়লার ভাগাড়। ড্রেনের পানি বাড়িতে উঠেছে। ড্রেনের পোকা আমাদের বিছানায় উঠে পড়ে। পৌরসভা একবারও ড্রেন গভীরভাবে পরিস্কার করেনি। রাস্তার অবস্থাও বেহাল। ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে বার বার বলা হয়েছে। ডেকে এনে দেখানো হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
ময়জুল বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে এই কষ্ট সহ্য করছি। কিন্তু আর পারছি না। সকল এলকাবাসী সহি সাক্ষর করে পৌরসভায় চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু কেউ কোন পাত্তা দিচ্ছে না। সৈয়দপুর নাকী প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। অথচ আমরা ইউনিয়ন পরিষদের মত সেবাটুকুও পাচ্ছিনা। কাউন্সিলর কাজী হায়দার ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও এলাকার বিন্দু মাত্র উন্নয়ন হয়নি। বরং দিন দিন নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত আমরা। এর দ্রুত বিহিত করতে হবে। নয়তো আগামী বর্ষা মৌসুমে এলাকায় টেকা দায় হবে।
রেহানা, জুলেখা, হামিদাসহ অংশগ্রহনকারী মহিলার বলেন, এই এলাকায় নয়বাজার সরকারি বিদ্যালয়, আইডিয়াল স্কুল, আদর্শ স্কুল রয়েছে। শত শত শিক্ষার্থী চরম ভোগান্তিতে চলাচল করছে। এই কাউন্সিলর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। মানববন্ধন আয়োজক মো. খালিদ বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে আজ রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। দ্রুত সমাধান না পাইলে রাস্তা অবরোধসহ সকল এলাকাবাসী পৌরসভা ঘেরাও করতে বাধ্য হবে।
রাশেদ খান বলেন, আমরা যেন মানুষ না, জানোয়ার। মেয়র, কাউন্সিলর কেউ ফিরেও তাকায়নি। শুকনা মৌসুমে ড্রেনের নোংরা দুর্গন্ধময় বিষাক্ত পানি রাস্তা উপচে বাড়িতে ঢুকছে। মলের পোকা বিছানা, আসবাবসহ খাবারে উঠছে। চরম মানবেতর অবস্থায় দিনাতিপাত করছি।
ডাস্টবিনের পঁচা আবর্জনার মাছির ভনভন আর মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ, রোগাক্রান্ত। অবর্ণনীয় দুঃসহ যন্ত্রণায় নিমজ্জিত এলাকাবাসীর পিট দেয়ালে ঠেকেছে। আগামী ১০ দিনে প্রতিকার না মিললে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামা হবে। আমরা কাউন্সিলরকে যেমন ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছি তেমনি চেয়ার থেকে ফেলেও দিতে পারি।
এ বিষয়ে ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মনোয়ার হোসেন বলেন, যেরুপ বরাদ্দ পাচ্ছি কাজ করে যাচ্ছি। ওই এলাকাবাসী আসলে দুর্ভোগে আছে। কিভাবে সমস্যাটি সমাধান করা যায় তার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দ্রুত ড্রেন সংস্কার, রাস্তায় আবর্জানার ভাগাড় অপসারনের জন্য পৌর পরিষদ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বলেন, ১০ নং ওয়ার্ডবাসীর দুর্ভোগের ব্যপারে অবগত আছি। আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। (ছবি আছে)
এম.চৌ:/এসময়
Leave a Reply