1. news@esomoy.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
  2. admin@esomoy.com : admin :
মেম্বারের অবহেলায় পেটের সন্তানকে দত্তক দিতে চান তার ৩য় স্ত্রী। - OnlineTV
সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন

মেম্বারের অবহেলায় পেটের সন্তানকে দত্তক দিতে চান তার ৩য় স্ত্রী।

কাজী জিহাদ
ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট

মেম্বারের অবহেলায় পেটের সন্তানকে দত্তক দিতে চান তার ৩য় স্ত্রী।

স্টাফ রিপোর্টারঃ

এক জনপ্রতিনিধি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মঞ্জুরাকে ভরণ-পোষণ দেন না, রাখেন না কোনো খোঁজ খবর।

পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও না খেয়ে চিকিৎসাবিহীন ছোট একটি রুমের মধ্যে দিন কাটছে মঞ্জুরার।

এমনভাবে অসহায় হয়ে পড়ায় গর্ভকালীন সময়ে ভাত-কাপড় ও চিকিৎসার বিনিময়ে পেটের সন্তানকে দত্তক দিতেও প্রস্তুত মঞ্জুরা সিমা।

মঞ্জুরা বেগম শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করীম মাদবরের স্ত্রী।

মঙ্গলবার জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট বাজারের ছাগলহাটা সড়কের পাশে মনিরের বেকারী সংলগ্ন একটি ভাড়া বাড়িতে বসে দ্য নিউজের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মঞ্জুরা সিমার।

মঞ্জুরা সিমা বলেন, আমি মাগুরা জেলার পাকা কাঞ্চনপুর গ্রামের মৃত রহিম মন্ডলের মেয়ে।

আমার নানা বাড়ি শরীয়তপুরে।

মা জুলেখা বিবি মারা যাওয়ার পরে উত্তারাধিকার সূত্রে আমি নানা বাড়ির ১ একর ২ শতাংশ ৭৫ পয়েন্ট সম্পত্তি পাওনা হই।

ওই সম্পত্তি পেতে আমার প্রয়োজন পড়ে ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের।

সার্টিফিকেট নিতে স্থানীয় ইউপি মেম্বার রেজাউল করীমের কাছে গেলে তিনি আমাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেন।

বিয়ের সময় মেম্বার তার আগের স্ত্রী ও সন্তানদের কথা আমার কাছে গোপন রাখে।

দূরের মেয়ে হওয়ায় আমি বিষয়টি ভালোভাবে জানতেও পারিনি। মেম্বারের কথায় বিশ্বাস করতে হয়েছে।

২০২২ সালে মেম্বার আমাকে বিয়ে করার পরে বেশ ভালোভাবেই আমাদের সংসার চলছিল। এসময় মেম্বার আমার জমানো সব টাকা-পয়সা নিয়ে যায়।

জমির সকল কাগজপত্রের নকল উঠিয়ে জমি দখলে যাওয়ার জন্য আদালতে মামলাও করি আমি।

গত পাঁচ মাস আগে মেম্বারের সন্তান আসে আমার গর্ভে।

এর কিছুদিন পরেই মেম্বার আমার সাথে খারাপ আচরণসহ মারধর করা শুরু করে। এমনকি মেম্বারের প্রথম ও দ্বিতীয় ঘরের স্ত্রী সন্তান আমার ভাড়া বাসায় এসে আমাকে নির্যাতন করে।

গর্ভের সন্তান ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে আমি অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। মেম্বার আমার ভরণ-পোষণ চিকিৎসা খরচ দেয় না।

কোনো খোঁজ খবরও রাখে না।

আমি যদি কারো সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করি, তা মেম্বার জানতে পারলে আমাকে বাসায় এসে মারধর করে চলে যায়।

গত রমজানে শরীয়তপুরের এক ডাক্তারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ভিজিট ছাড়া চিকিৎসা নিয়েছি।

কিন্তু ওই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ আজও আমি কিনতে পারিনি, মেম্বারকে বারবার বলা সত্ত্বেও মেম্বার আমাকে ওষুধ কিনে দেয় না, খাবার দেয় না।

মামলার কারণে জমি থেকে কোনো আয়ও হয় না আমার। গত এক সপ্তাহ সময় ধরে আমি ঘরের মধ্যে না খেয়ে পড়ে আছি।

এমন না খেয়ে, চিকিৎসা না নিয়ে যদি ঘরে পড়ে থাকি। তাহলে আমিও মরব, আমার সন্তানও মারা যাবে।

যদি কোনো স্বহৃদয়বান ব্যক্তি বা নিঃসন্তান দম্পত্তি আমার গর্ভকালীন সময়ের ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে তাহলে জন্মের পর আমি সন্তানকে দত্তক হিসেবে দিয়ে দেব তাকে।

ইউপি সদস্য রেজাউল করীম আপনাকে ভরণ-পোষণ দেয় না- এমন কোনো অভিযোগ থানায় বা কোথাও করছেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে মঞ্জুরা বেগম বলেন, ভরণ-পোষণের দাবি নিয়ে আমি পরিষদে গিয়েছিলাম। মেম্বার রেজাউল করীম আমাকে চেয়ারম্যানের সামনেই মারধর করেছে।

চেয়ারম্যানকে অনেকবার জানিয়েছি। কিন্তু চেয়ারম্যান কোনো বিচার করেননি।

রেজাউল করীমের এমন অত্যাচার সম্পর্কে আমি গত রমজানে এসপি স্যারকে ফোন করে জানিয়েছিলাম।

তিনি সব কিছু জানেন।

বিষয়টি নিয়ে সেনেরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করীম মাদবর বলেন, ‘আমি তাকে চাল কিনে দিলে সে চাল বিক্রি করে দেয়। এরপর আবার চাল চায়।

গতকালকে তাকে আমি ৪০০ টাকা দিয়েছি স্যালাইন খাওয়ার জন্য। ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসার বিনিময়ে যদি সে গর্ভের সন্তান অন্যকে দিয়ে দেয়, তাহলে তো বুঝা যায় সে এই দেশে বাণিজ্য করতে এসেছে।

আমার আরো দুইজন স্ত্রী আছে। আমি তাকে বলেছি, মাসে ১০ দিন সময় সে পাবে।

কিন্তু সে কথা না শুনে পরিষদে এসে সকলের সামনে আমার সাথে চিল্লাপাল্লা করেছে।

পরে আমি তাকে মারধর করেছি।’

সেনেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল জমাদ্দার বলেন, সকল সদস্যদের নিয়ে পরিষদের সভা চলতেছিল। এমন সময় রেজাউল মেম্বারের স্ত্রী মঞ্জুরা বেগম এসে উল্টাপাল্টা আচরণ করেছিল।

আমি ওই মহিলাকে বলেছিলাম বাড়িতে যাও। কিন্তু সে আমার কথা শুনেনি। পরে হাতাহাতি হয়েছে।

আমার জানামতে রেজাউল তার স্ত্রীকে ঠিকমত ভরণ-পোষণ দেয়। আর মঞ্জুরা যে গর্ভবতী সেই বিষয়টি আমি জানি না।

তাদের পারিবারিক বিষয় নিয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, বিষয়টি আমি আপনার কাছেই প্রথম জানতে পারলাম।

মেম্বার যদি তার স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ না দেয়, তাহলে মেম্বারের সম্মানি থেকে বা বিকল্প উপায়ে আমরা অসুস্থ্য ওই স্ত্রীকে সাহায্য করতে পারব।

কিন্তু তার তো আমাদেরকে জানাতে হবে। উনি যদি নিজে বা কোনো মাধ্যমে আমাদেরকে বিষয়টি জানান তাহলে আমরা তাকে সাহায্য করব।

বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো: মাহবুবুল আলম বলেন, মঞ্জুরা সিমার জমি-জমা সংক্রান্ত ঝামেলার বিষয়টি আমি জানতাম।

কিন্তু সে যে গর্ভবতী এবং চিকিৎসা পাচ্ছে না, এই বিষয়টি জানতাম না। এখন তার সাথে কথা জানতে পেরেছি তিনি গর্ভবতী এবং অসুস্থ।

আমি মঞ্জুরাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিকিৎসার জন্য সহায়তা করব।

মো.মি/এসময়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
All rights reserved © 2019
Design By Raytahost