প্রধানমন্ত্রী হত্যা মামলা ফাঁসির আসামির প্রধান সহকারী পেল সরকারি লিচুবাগান উপহার
পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ
৯ এপ্রিল ২০২৪
পাবনার ঈশ্বরদীতে এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটিয়েছে মাদ্রাসা সুপার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতারা। যা নিয়ে আওয়ামীলীগ দলীয় সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মাঝে চাপা উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের কোলেরকান্দি বটতলায় (জয়বাংলা মোড়) মিরকামারী আদর্শ আলিম মাদ্রাসার নিজস্ব লিচুবাগান নিয়ে এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।
কোন প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই কয়েক লক্ষ টাকার লিচু বাগান নামমাত্র পনেরো হাজার টাকা মূল্যে ধরে উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী হত্যাচেষ্টা মামলার ফাঁসির আসামি জাকারিয়া পিন্টুর প্রধান সহযোগী, সাবেক ঈশ্বরদী সরকারী কলেজ ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলামের হাতে। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আতিয়া ফেরদৌস কাকলী, অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল ও দাতা সদস্য জয়নাল হোসেন সিন্ডিকেট স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সালাম প্রামানিক এর সহযোগিতায় বাগানটি বিক্রি করে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা
জানা গেছে, মাদ্রাসাটি আলীম পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে মাদ্রাসাটির উন্নয়ন তেমন হয়নি বললেই চলে। লিচু গাছগুলোতে এ বছর তিন লক্ষ টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা ছিল। নিয়ম অনুযায়ী বিক্রিত অর্থ মাদ্রাসার শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজে লাগানো হয়। তবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের গাছ বা ফসল বিক্রি করতে হলে প্রতিষ্ঠান কমিটি স্থানীয় সকলকে অবগত করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ্যে নিলাম ডাকের মাধ্যমে বিক্রির নিয়ম থাকলেও তা সম্পূর্ণভাবে অমান্য করা হয়েছে। এভাবে আওয়ামীলীগ নেতাদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে একজন বিএনপি নেতার কাছে মাদ্রাসার বাগান বিক্রি করায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাঃসম্পাদক বাবু সরদার বলেন,জাকারিয়া পিন্টুর ভয় দেখিয়ে জামাত বিএনপির আমলে এমন কোনো চাঁদবাজী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নেই যে রফিকুল করেনি আবার পিন্টু এই বটতলায় রফিকুলকে সাথে নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে এবং পিন্টু বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা হত্যা মামলা হলে এই রফিকুলই এখানে তাকে লুকিয়ে রেখেছিল, সেই রফিকুলকে সরকারি বাগান উপহার দেওয়া মানে, যারা আওয়ামীলীগ করে তাদের হাতে চুড়ি পরিয়ে দেওয়া সমান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বেশ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,আগে শ্রমিকদল থেকে আওয়ামীলীগে আসা স্থানীয় সালাম নেতার সহযোগিতায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, অবৈধ দাতা সদস্য ও সভাপতি একজন বিএনপি নেতার কাছে গোপনে বাগান বিক্রি করে সেই টাকা নিজের পকেটে রেখেছে। এটা খুব দুঃখজনক ব্যাপার।এই সভাপতি কাকলী মাদ্রসার নামে প্রতিবার বরাদ্দ নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার টিআর কাবিখা হাতিয়ে নেয় এবং সুপার নিয়োগ ও বোর্ডের কাজের কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা নিজ পকেটে চালান করে।
৭নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান মাহফুজ বলেন, এই এলাকায় সারাজীবন জামাতবিএনপির সাথে লড়াই করি আমরা আর নেতারা সরকারি সুবিধা দেয় ওদের এই কষ্ট কাকে বলবো, একজন যে কোনো নৌকার লোককে যদি গাছ দিতো তবুও মানতাম।
বাগান বিক্রির ব্যাপারে অভিযুক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল জলিলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সামান্য লিচু গাছ নিয়ে সাংবাদিকদের এতো কথা কেন,সব সভাপতি জানে, আর দাতা সদস্যের পদের বৈধতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন একটুআধটু এদিকসেদিক না করলে হয় না।
মাদ্রাসা কমিটির দাতা সদস্য মোঃ জয়নাল বলেন, সব নিয়ম মেনে সবাইকে অবগত করেই বাগান বিক্রি করা হয়েছে। কি নিয়ম মেনে বিক্রি করা হয়েছে এবং তিনি কেমনে দাতা সদস্য হলেন তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করা হলে, তিনি এসব নিয়ে সাক্ষাৎ এ কথা বলবেন বলে ফোনের সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করেন।
এ ব্যাপারে মিরকামারী আদর্শ আলীম মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি আতিয়া ফেরদৌস কাকলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, লিচু বাগান বিক্রির ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না,মাদ্রসা সুপার জানে এবং উপরের আওয়ামীলীগ নেতাদের সুপারিশে এই কাজ হয়েছে বলে জানি, কিছু জানতে হলে তাদের কাছে যান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ওহাহেদুজ্জামান বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে গোপনে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বাগান বিক্রির ব্যাপারটা অন্যায় হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আসেনি, যদি অভিযোগ পাই তবে আমরা খতিয়ে দেখবো।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বলেন, অনিয়ম করে বাগান বিক্রি করাটা খুব গুরুতর অপরাধের বিষয়। আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
Leave a Reply