যশোর জেলা প্রতিনিধি: যশোরের কেশবপুরে শান্তিপূর্ণভাবে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে হয় এ ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনে তিনটি পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ঘোড়া প্রতীকের মফিজুর রহমান ১৮ হাজার ৪৬৬ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে তালা প্রতীকের আব্দুল্লাহ আল মামুন ৩২ হাজার ৪৩৪ ভোট ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফুটবল প্রতীকের রাবেয়া ইকবাল ৩৭ হাজার ৩০৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এদিন রাত সাড়ে ৯টায় ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুহিন হোসেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মফিজুর রহমানের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি শালিক প্রতীকের নাসিমা আকতার সাদেক পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৬ ভোট। এ ছাড়া দোয়াত-কলম প্রতীকের আব্দুল্লাহ-নূর-আল আহসান বাচ্চু ১৩ হাজার ৯২৯ ভোট, হেলিকপ্টার প্রতীকের কাজী মুজাহীদুল ইসলাম পান্না ১০ হাজার ৯৪৮ ভোট, জোড়া ফুল প্রতীকের ওবায়দুর রহমান ২ হাজার ১১৫ ভোট, মোটর সাইকেল প্রতীকের এস এম মাহবুবুর রহমান ১ হাজার ৭৬৩ ভোট ও আনারস প্রতীকের ইমদাদুল হক পেয়েছেন ৬৯৫ ভোট।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে আব্দুল্লাহ আল মামুনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি উড়োজাহাজ প্রতীকের পলাশ কুমার মল্লিক পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪৯১ ভোট। এ ছাড়া মাইক প্রতীকের আব্দুল লতিফ রানা ৬ হাজার ৪৪৩ ভোট, চশমা প্রতীকের সুমন সাহা ৬ হাজার ১৯০ ভোট ও টিউবওয়েল প্রতীকের মনিরুল ইসলাম পেয়েছেন ৩ হাজার ১০৭ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাবেয়া ইকবালের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি কলস প্রতীকের মনিরা খানম পেয়েছেন ২৪ হাজার ১৫৭ ভোট।
নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে স¤পন্ন করার জন্য মাঠে ছিল ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা টহল দিয়েছেন।
বিভিন্ন কেন্দ্রে দেখা গেছে, এদিন সকালে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার কিছুটা বেড়েছিল। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কেশবপুর পৌরসভা নির্বাচনে প্রথমবার ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর বাইরে ১১টি ইউনিয়নের ভোটাররা এবারই প্রথম ভোট দিলেন ইভিএমে। প্রথমবার ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে অনেকেই কিছুটা সমস্যায় পড়লেও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ভোটারদের বুঝিয়ে দেন।
সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখ যায়, ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুই ঘন্টায় ৭১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৪৯৪ জন। এখানে ভোট দিতে আসা উপজেলার ভোগতী এলাকার শফিউদ্দিন মোড়ল (৭০) বলেন, ইভিএমে ভোট দেওয়ার সময় বুঝতে অসুবিধা হওয়ায় ওখানকার স্যাররা (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বুঝিয়ে দেন। পরে কোন অসুবিধা হয়নি।
এ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইভিএম হলো সময় উপযোগী পদ্ধতি। খুবই অল্প সময়ের ভেতর ভোট দেওয়া যায়। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসাররা জানান, কেশবপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৪৭৪ জন। কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১২টা পর্যন্ত ২১০ জন ভোটার ভোট দেন। ওই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৮৭ জন। মাগুরাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩৭৭ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ওই কেন্দ্রের মোট ভোটার দুই হাজার ১৪২ জন। নতুন মূলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩৮০ জন ভোটার ভোট দেন। ওই কেন্দ্রে দুই হাজার ২৪৮ জন ভোটার।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে প্রথম ধাপে কেশবপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ২০ হাজার ৯৫৪ জন। মোট ৯৫টি কেন্দ্রের ৬৭০টি কক্ষে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন ৯৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৬৭০ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও এক হাজার ৩৪০ জন পোলিং অফিসার।
হু.ক/এসময়
Leave a Reply