বেনাপোল জেলা প্রতিনিধি: চলতি বছরে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে সড়ক দূর্ঘটনায় পা হারানো মিফতাহুল জান্নাত।
সে যশোরের শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। গত রবিবার (১২ মে) তার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
মিফতাহুল জান্নাত বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী শিক্ষক এবং শার্শা উপজেলার দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
জানা যায়, জান্নাতের বাবা উপজেলার নাভারণে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তিনি জমি বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েকে ভারতের ভেলোরে নিয়ে যান। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) তার কৃত্রিম পা লাগানো হয়। এতে রফিকুলের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ ব্যয় হয়। এতে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। মেয়েকে নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন থাকায় প্রি-ক্যাডেটের চাকরি চলে যায় রফিকুলের। পরে বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে রফিকুলকে ওই বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।
রফিকুলের সম্পদ বলতে সাড়ে চার শতক জমি এবং জমির ওপর একটি ছোট্ট ঘর ছাড়া তার আর কোন সম্পদ নেই। স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাঁর পরিবার। মিফতাহুল জান্নাত রফিকুলের বড় সন্তান। ছোট সন্তান ছেলে মুন্তাকিম রাফি (৮)। উপজেলার নাভারণ রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রাফি। বিদ্যালয়ের বেতন এবং বাড়িতে টিউশনি করে তাঁর মাসে ১০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। এই আয় দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করান তিনি।
জান্নাত বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি খুব খুশি।আমি ডাক্তার হতে চাই। যত কষ্টই হোক ভালো করে লেখাপড়া করে আমি ডাক্তার হব। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।
জান্নাতের বাবা রফিকুল বলেন, মিফতাহুল প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে আমি খুশি। ওর কষ্টটা আমি বুঝি। আমার খুব সামান্য আয়। তাই-ই দিয়ে ওকে আমি লেখাপড়া করিয়ে যাচ্ছি। জান্নাত ডাক্তার হতে চায়। যত কষ্টই হোক আমি তাকে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব।
বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মমিনুর রহমান বলেন, মিফতাহুল জান্নাত খুব মেধাবী ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দুর্ঘটনায় এক পা হারালেও সে মনোবল হারায়নি। এক পায়ের ওপর ভর করে আস্তে আস্তে বড় হয়েছে সে। চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। জান্নাত অত্যান্ত গরিব পরিবারের মেয়ে। আর্থিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে লেখাপড়ায় আরো অনেক দুর এগিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ মার্চ সকালে জান্নাত বিদ্যালয়ের উদ্দ্যেশে বাড়ি থেকে বের হয়। সে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় ভ্যানটি নাভারণ বাজারের সালেহা সুপার মার্কেটের সামনে পৌছালে উল্টো দিক থেকে আসা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সে মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। এ সময় চালক পিকআপটি তার শরীরের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন। এতে তার ডান পা ও ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে বাদ দেন।
হু.ক/এসময়
Leave a Reply