নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: চলতি মৌসুমে এক সপ্তাহ ব্যবধানে নড়াইলে নতুন বাজারে উঠা সব ধরনের বোরো ধানের দাম মনপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কমেছে। ফসল ঘরে উঠতে না উঠতেই বাজার দরে হতাশ চাষিরা। চড়া দামে সার-সেচ-শ্রম দিয়ে ফসল ফলাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও সে অনুপাতে ধানের দাম না পাওয়া তারা ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। বাজারে সব ধরনের দামের দাম বৃদ্ধি পেলেও ধানের দাম নিম্নমুখি হওয়ায় কৃষক বিপাকে। কৃষক বাঁচাতে ধানের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দর নিশ্চিতের দাবি তাদের।
নড়াইল কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় বোরো আবাদকৃত মোট ৫০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমি থেকে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট আবাদী জমির মধ্যে ৯৭ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
নড়াইলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (১৭ মে) তুলারামপুর হাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চাষিরা তাদের এই মৌসুমের দায়-দেনাসহ অপরিহার্য নানা প্রয়োজনে উৎপাদিত ধান বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসছে। এতে বেলা বাড়তে না বাড়তেই ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাপক সমাগমে হাট কানায় ভরে ওঠে।
হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক ও ধান ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার সর্ববৃহৎ এ পাইকারি ধানের মোকামে বোরোর মোটা জাতের মধ্যে হাইব্রিড হিরাধান, ব্রিধান ৭৪, মাঝারি জাতের মধ্যে সূবর্ণলতা, ছক্কা, এসএল ৮এইচ এবং সরু জাতের ব্রিধান ৫০, ৮৯, তেজগোল্ড ধান প্রচুর পরিমাণে আমদানি হয়েছে। মোটা ধান প্রতি মন ১ হাজার ৫০ এবং চিকনধান ১ এক হাজার ১৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব ধান গেলো সপ্তাহে প্রতি মন ১০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।
সদরের লস্কারপুর গ্রামের চাষি উজ্জল মোল্যা অভিযোগ করে বলেন, বোরো আবাদ করতে যেয়ে প্রথম থেকেই শ্রম, ডিজেল সার, কীটনাশকসহ সব কিছুর যোগান দিতে বেসামাল কৃষককে ধার-দেনার করতে হয়েছে, বিভিন্ন সমিতিসহ নানা মাধ্যম থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও যথাযথ পরিচর্যায় বোরোর ভালো ফলনে ধার-দেনা শোধ করে লাভের মুখ দেখবে ভেবে কৃষক আশায় বুক বাঁধলেও নতুন ধান ঘরে উঠতে না উঠতেই ধানের কাঙ্খিত দাম না পাওয়া চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
বছর বছর ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্রমাগত লোকসান দিয়ে চাষিদের আর্থিক অবস্থার ক্রমে অবনতি হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করে তুলারামপুর বাজার বনিক সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট কৃষিপণ্য কারবারি মো. জিল্লুর রহমান বিশ্বাস বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মূল্য নিশ্চিত করে তাদের ভাগ্য উন্নয়ন ব্যতীত কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অসম্ভব।
অন্য দিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপজেলা কুষি অফিসার মোহম্মাদ রোকনুজ্জামান বলেন, ফসলের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজার দর নিশ্চিত জরুরি বলে মনে করেন। তিনি কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ বিষয়ে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তৎপর রয়েছে বলেও জানান।
হু.ক/এসময়
Leave a Reply