কালিয়াকৈর মাহমুদ জিন্স কারখানা মালিকের ছেলে রাফি মাহমুদএর ওপর হামলা।
স্টাফ রিপোর্টারঃ
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা হরতকিতলা এলাকায় মাহমুদ জিন্স কারখানার মালিকের ছেলের রাফি মাহমুদের ওপর শ্রমিক নামধারী কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সকল শ্রমজীবী শ্রমিকারা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা হরতকিতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
শ্রমিকদের মারধরে আহত রাফি মাহমুদ কালিয়াকৈর উপজেলার মাহমুদ জিন্স লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাফি মাহমুদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ বলছে, পোশাকশিল্প একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করে সবেমাত্র স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে।
এ রকম একটি সময়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা হরতকিতলা এলাকায় অবস্থিত মাহমুদ জিন্স কারখানায় শ্রমিক নামধারী কিছু দুষ্কৃতকারী কারখানা কর্তৃপক্ষের ওপর হামলা করে।
বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাহমুদ জিন্স লিমিটেড একটি কমপ্লায়েন্ট কারখানা। ২০২২ সালে মাহমুদ জিন্স লিমিটেডকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কোলস ১ বছর মেয়াদি ক্রয়াদেশের বুকিং দিলে কারখানাটি ১২০ কোটি টাকার সুতা কেনে।
এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রেতা কোলস ক্রয়াদেশ ৫২ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে।
করোনাভাইরাসের সমস্যা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই প্রতিষ্ঠানটি এ আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তা ছাড়া কারখানাটি আগে থেকেই পর্যাপ্ত গ্যাসও পাচ্ছিল না।
এ পরিস্থিতেতে একটি ভালো মানের কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত কলকারখানা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয় একটি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৩ অক্টোবর কারখানার শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের মজুরি বাবদ ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।
১৬ নভেম্বর স্টাফদের বকেয়া মজুরি থেকে ২ কোটি টাকাও পরিশোধ করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, শ্রমিক ও স্টাফদের চূড়ান্ত পাওনা, সার্ভিস বেনিফিট ও ছুটির টাকা বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা ২৮ নভেম্বর পরিশোধ করার কথা ছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই টাকা পরিশোধ করার জন্য কারখানা মালিক তার গুলশানের বাড়িটি বিক্রির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেন।
তবে পেমেন্ট না পাওয়ার কারণে ২৮ নভেম্বর শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়।
মালিক বিষয়টি নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায়ও বসেন।
সেই মোতাবেক, কারখানা যাবতীয় বকেয়া পাওনা আগামী ২৮ ডিসেম্বর এবং ২৬ জানুয়ারি পরিশোধ করবে মর্মে অঙ্গীকার করে বিজিএমইএ।
বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল পক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়।
অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে পাওনা পরিশোধ নিয়ে কারখানা মালিকের ছেলে মো. রাফি মাহমুদ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
এ সময় শ্রমিক নামধারী কিছু উসকানিদাতা, দুষ্কৃতকারী হঠাৎ করে তার ওপর আক্রমণ করে এবং আহত করে ফ্যাক্টরিতে নিয়ে আটকে রাখে।
পরে টহলরত সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ ফ্যাক্টরিতে আটক থাকা রাফি মাহমুদকে উদ্ধার করে।
আলোচনার মধ্যে এ রকম হামলা অনভিপ্রেত।
বিজিএমইএ মনে করে, এ ধরনের ঔদ্ধত্য সমগ্র শিল্পের ওপর আঘাত।
যে শিল্প দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, যে শিল্প প্রত্যক্ষভাবে ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে, যে শিল্প পরোক্ষভাবে দেশের ৫ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার সুরাহা করেছে, তার ওপর এ আঘাত মোটেও কাম্য নয়।
এ ঘটনা বহির্বিশ্বে এ দেশের শিল্প সম্পর্কে ভুল বার্তা দেবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে পোশাক শিল্পে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সক্রিয় থেকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
এ দিকে হামলার বিষয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাফি মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল।
দুষ্কৃতকারীরা চারদিক থেকে আমার ওপর আক্রমণ শুরু করে।
পরে আমাকে টেনে ফ্লাইওভারের নিচে ফেলে দেয় এবং ইট, রড ও গাছের ডাল দিয়ে মারধর করে।
আমার মাথার পেছনে আঘাত লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি কিছুক্ষণের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাই।
পরে যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে, তখন অনুভব করলাম তারা আমার ঘাড় চেপে ধরে কারখানাযর ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে।
সেখানে নিয়ে আমাকে তালা দিয়ে রাখে।’
Leave a Reply