খাগড়াছড়ি থেকে এস চাঙমা সত্যজিৎঃ
ঢাকায় সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার ওপর “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি”র হামলা ও তার প্রতিবাদে সংক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতার আয়োজিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় অভিমুখে মিছিলে পুলিশী হামলার প্রতিবাদে এবং “স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি” নামক ফ্যাসিস্ট সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র জনতার সংগ্রাম পরিষদ পানছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
আজ শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ সকাল ১১টায় “উগ্রসাপ্রদায়িকতা, জাতি-বিদ্বেষ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান” এই ব্যানার শ্লোগানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলায় পুজগাং এলাকায় এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের আগে পানছড়ি উপজেলার পুজগাঙের চেঙ্গী সারিবালা কলেজ থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পূজগাং বাজার হয়ে নিচের পূজগাং বাজার ঘুরে উপর পুজগাং বাজারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
বিক্ষোভে পানছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫ শতাধিক ছাত্র জনতা অংশগ্রহন করেন।
সমাবেশে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনিল চন্দ্র চাকমার সভাপতিত্বে ও সাবেক মেম্বার মানিকপুদি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ১ নং লোগাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমা, ২নং চেঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনন্দ জয় চাকমা, সাবেক চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে কনক বরণ চাকমা।
সাবেক চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা বলেন, জাতীয় অস্তিত্ব সংকটের সময়ে আমাদের ঘরে বসে থাকলে হবে না। বিশেষ করে ছাত্র যুবকদের এ সময়ে সোচ্চার হতে হবে। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করতে হবে।
তিনি উগ্র মৌলবাদী ও ফ্যাসিস্ট স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি নামক সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।
জয় কুমার চাকমা বলেন, দেশ এখন দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেয়েছে বলে আমরা শুনে থাকি। কিন্তু আমরা পাহাড়ি জনগণ আগের মতো এখনো নিপীড়িত নির্যাতিত। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের প্রতি এ রকম বৈষম্য করবে ভাবতেও পারিনি।
তিনি আরও বলেন বর্তমানে পরিস্থিতিতে আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শামিল হতে হবে।
তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ঢাকায় সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার ওপর হামলাকারী স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি নামক সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবি জানান এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার করে যদি শাস্তি দেয়া না হয় তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবো বলে হুঁশিয়ারি দেন।
কনক বরণ চাকমা বলেন, আমরা যুগে যুগে অবহেলিত নির্যাতিত। আমাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি কোন সরকার দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, দেশে এক ফ্যাসিস্ট সরকার পতন হলেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ফ্যাসিস্টের মত আমাদের পাহাড়িদের উপর দমন পীড়ন করে যাচ্ছে। কোন সরকারই আমাদের জন্য কিছু করবে না। সেজন্য আমাদের আন্দোলনের বিকল্প নেই। তিনি ঘরে বসে না থেকে আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
আনন্দ জয় চাকমা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ পতন হলেও আজও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। যার কারণে ঢাকার মত এলাকায় হামলার শিকার হতে হয়। পুলিশ বাহিনীও আগের মতো ফ্যাসিস্ট আচরণ শুরু করে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদেরকে নিজেদের অধিকারের কথা বলতে হবে। আমাদের ভয় পেলে চলবে না। এই পাহাড়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। আজ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সেজন্য আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অচল করে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অনীল চন্দ্র চাকমা বলেন, আমরা যুগে যুগে আমাদের জাতিগত পরিচয় দাবি করে আসছি। কিন্তু কোন সরকারই আমাদের জাতিগত পরিচয় সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের ৬ মাস গত হয়ে গেলেও পাহাড়ে কোন অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
তিনি আরও বলেন বার বার আমাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। আমারা রাষ্ট্র কতৃক বৈষম্যের শিকার। এই রাষ্ট্র কারোর নয়, এটা হিন্দু বৌদ্ধ, সনাতন , খ্রীষ্টান, মুসলিম, পাহাড়ি সকল জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র। আমরা এই দেশে নিজস্ব অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজ এই পরিস্থিতিতে সকলে মিলে হাতে হাত রেখে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, তা না হলে আমরা বিলিন হয়ে যাব।
সবশেষে তিনি ভুইফোঁড় উগ্রবাদি সংগঠন স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টিকে নিষিদ্ধ করে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার কর্মসূচীতে হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সংক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার মিছিলে পুলিশী হামলার ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে দোষী পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
এসময়/