খাগড়াছড়ি থেকে এস চাঙমা সত্যজিৎঃ
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র রামগড় উপজেলা শাখার ৭ম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।
আজ সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের ব্যানার শ্লোগান ও আহ্বান ছিল “সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাও, পাহাড়ে শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন এবং তার দোসরদের প্রতিহত করে জাতীয় অস্তিত্বের রক্ষা কবচ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রাম জোরদার করুন”।
কাউন্সিল অধিবেশন শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যারা আত্মবলিদান দিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পিসিপি’র রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি বাহাদুর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পদক তৈমাং ত্রিপুরার সঞ্চালনায় কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক সমর চাকমা, পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহসভাপতি মিঠুন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি গুলোমনি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম রামগড় উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন চাকমা ও ইউপিডিএফ রামগড় ইউনিটের সমন্বয়ক এডিশন চাকমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রামগড় ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি সুমন কান্তি চাকমা।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক ধন মোহন ত্রিপুরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনও পাহাড়িদের বিরুদ্ধে সেনাশাসন জারি রেখে অবর্ণনীয় নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। রামগড়সহ পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ প্রতিনিয়ত নানা নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। উদ্দেশ্যপ্রোণিতভাবে সেনা অপারেশনের নামে জনগণকে হয়রানি করা হচ্ছে। রামগড়ে যৌথ বাহিনীর অপারেশনকালে হাচুকপাড়া-তৈচাকমা থেকে চলতি মাসের শুরুতে ৩ জন ছাত্র যুবককে আটক করে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। সমানতালে ভূমি বেদখলের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তারা বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পতন হলেও পাহাড়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র বিরাজ করছে। পাহাড়িরা এখনও রাজনৈতিকভাবে জাতিগত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। দেশের সমগ্র ছাত্র জনতার সাথে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদও ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু চব্বিশের অভ্যুত্থানে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যে চেতনা পার্বত্য চট্টগ্রামে তা দেখতে পাচ্ছি না। বরং পাহাড়িদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ১৯-২০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে সেনা-সেটলার কর্তৃক পাহাড়ি ছাত্র জনতার ওপর নৃশংস সাম্প্রদায়িক হামলা-খুন ও বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা তারই উদাহরণ।
বক্তারা বলেন, সম্প্রতি গত ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার মত জায়গায় এনটিসিবি ও শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্র-জনতার ওপর উগ্রসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি ও পুলিশী হামলার ঘটনা প্রমাণ করে যে দেশের শাসকগোষ্ঠি পাহাড়িদের তথা সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের অধিকার তো দূরের কথা, তাদের জাতিগত পরিচয় পর্যন্ত স্বীকৃতি দিতে চায় না।
বক্তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রের এহেন দমন পীড়ন ও বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে পাহাড়িদের ভাষা, শিক্ষা-সংস্কৃতি তথা রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আপোষহীন লড়াই করতে হচ্ছে। পাহাড়ে ছাত্র আন্দোলন যাতে শক্তিশালী না হয় সেজন্য শাসকগোষ্ঠি অত্যন্ত সুকৌশলে ‘৭১ সালে পাক হানাদারদের ন্যায় রঙবেরঙের গৃহপালিত বিভিন্ন সংগঠন সৃষ্টি করে ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস এই সাক্ষ্য দেয় যে, অন্যায়ভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন করে কোনো জাতিকে দমিয়ে রাখা যায় না। ঐক্যবদ্ধ ছাত্র জনতার কাছে কোনো বাহিনীর গুলি-বারুদ-লাঠি কাজ করে না। ‘২৪-এর ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান তারই জলন্ত প্রমাণ। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পাহাড়ে ছাত্র সমাজকেও ফৌজি শাসকের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তবেই পাহাড়ে মুক্তি আসবে।
কাউন্সিল অধিবেশন শেষে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে তৈমাং ত্রিপুরাকে সভাপতি, ধন মোহন ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক ও সুরেশ ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট রামগড় উপজেলা শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহসভাপতি মিঠুন চাকমা নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
এসময়/