প্রতিষ্ঠান গঠনে মালিক-কর্মচারী সম্পর্ক: সম্মান, সততা ও ত্যাগই মূল ভিত্তি।
মোঃ শাহজাহান বাশার, সাংবাদিক ও কলামিস্টঃ
একটি প্রতিষ্ঠান- হোক তা ব্যবসায়িক, সামাজিক কিংবা মানবিক উদ্যোগ- এর ভিত গড়ে ওঠে শুধুমাত্র আধুনিক স্থাপত্য, প্রযুক্তি বা মূলধনের উপর নয়; বরং এর প্রাণ হচ্ছে মানুষ। আর মানুষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই সংগঠন তখনই দীর্ঘস্থায়ী ও সফল হতে পারে, যখন মালিক ও কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক *আন্তরিকতা, সম্মান, সততা ও ত্যাগ*ের চর্চা থাকে।
আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে অনেক প্রতিষ্ঠান রাতারাতি শুরু হয়, কিন্তু কিছুদিন পরই ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। কেন? এর অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে *মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আন্তরিকতার অভাব*। মালিক যদি কর্মচারীদের যথাযথ সম্মান না দেন, তাদের অবদানকে মূল্যায়ন না করেন- তবে একসময় সেই কর্মীরা নিজেদের মধ্যে একধরনের বিমুখতা ও হতাশা অনুভব করেন। ফলে প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়, বন্ধ হয়ে যায় উদ্ভাবনী চিন্তা।
অন্যদিকে, একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা যদি আন্তরিক, সৎ, ত্যাগী ও দায়িত্বশীল হন- তাহলে প্রতিষ্ঠানটি যেমন লাভবান হয়, তেমনি এর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে বহুগুণে। তবে এই সৎ ও পরিশ্রমী কর্মীদের পাশে যদি একজন *সৎ, দায়িত্বশীল ও মানবিক গুণসম্পন্ন মালিক না থাকেন*, তাহলে সেই সদিচ্ছাও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়।
এখানে একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা যেতে পারে- একটি প্রতিষ্ঠান যখন তার পুরনো, সৎ ও বিশ্বস্ত কর্মচারীদের অবহেলা করে নতুন মুখ আর আড়ম্বরপূর্ণ মডেলে প্রতিষ্ঠান চালাতে চায়, তখন সে প্রতিষ্ঠান হয়তো কিছু সময় চকচকে থাকবে; কিন্তু ভিতরে ভিতরে ধসে পড়বে। এর বিপরীতে, যে প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের নিয়ে গর্ব করে, সময়মতো সম্মান, প্রশংসা ও ন্যায্য সুবিধা দেয়, সেখানে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করে কাজ করে।
মালিকদের মনে রাখা উচিত- কর্মচারীরা শুধু মজুরি বা বেতন চায় না, তারা চায় *স্বীকৃতি, সম্মান এবং সহানুভূতি*। আর কর্মচারীদের মনে রাখা উচিত- মালিকের বিনিয়োগ, পরিশ্রম ও ঝুঁকির মূল্য বুঝে ত্যাগ ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করাই প্রকৃত দায়িত্ব।
প্রতিষ্ঠান গড়তে গেলে যেসব গুণাবলি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হলো:
আন্তরিকতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সততা ও নৈতিকতা,ত্যাগ ও পরিশ্রমের স্বীকৃতি,সাংগঠনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা*একসাথে পথচলার মানসিকতা
একটি সৎ ও উদার মনের মালিক যেমন তার কর্মীদের হৃদয় জয় করতে পারে, তেমনি আন্তরিক কর্মীরাই একজন মালিকের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, একটি প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র প্রযুক্তি ও কৌশলের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না- তার ভিত্তি গড়ে উঠে *মানবিক সম্পর্ক, সম্মান ও আস্থার শক্ত পাথরে।* তাই মালিক ও কর্মচারীর সম্পর্ক হোক সহযোগিতার, সম্মানের ও একসাথে এগিয়ে যাওয়ার। তাহলেই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ হবে দীপ্তিময়।
এসময়/