চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি হাবিবুর রহমানঃ
কুড়িগ্রাম চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধ ভাবে চলছে বালু লুটের মহোৎসব।
প্রতি বছরে কোটি কোটি টাকার বালু লুট করছে বালুখেকো সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর থেকে বালি লুটের মহোৎসব চলার সাথে সাথে বেড়েই চলছে অবৈধ ড্রেজারের ব্যবসা।
কোন প্রকার নিয়ম না মেনেই ব্রহ্মপুত্রের চিলমারীতে ব্যাঙের ছাতার মত, অবৈধ ড্রেজার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলনের ফলে নদীর দিক পরিবর্তন হয়ে একাধিক স্রোত তৈরি হয়েছে, গ্রামের পর গ্রামসহ হাজার হাজার একর জমি চলে যাচ্ছে নদীর গর্ভে।
প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর ধরে বালু লুটের মহাউৎসব চলছে, অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন দেখেও যেন না দেখার মত।
মাঝে-মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব সেরে নিচ্ছেন দায়িত্বরতরা।
সেই সুযোগে বালু খেকোরা লুটে নিচ্ছে বছরে কোটি কোটি টাকার বালু, অজ্ঞাত কারণে সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন না প্রশাসন।
কতিপয় বালু ব্যবসায়ীরা চিলমারীর উন্নয়নের কথা বলে বালু উত্তোলন করছে, বছরে লাখ লাখ ঘনফুট বা সিএফটি বালি চিলমারীর বাইরে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
জানা গেছে, উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র থেকে বছরের পর বছর ধরে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের উৎসব শুরু করেন একটি বালু খেকো সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।
পরে এটিতে তৎকালীন সরকারের আমলে নামধারী দলীয় নেতারা জড়িয়ে পড়েন এবং ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে চালায় বালু উত্তোলনের উৎসব।
ধীরে ধীরে ২/১টি ড্রেজার দিয়ে কাজ শুরু করেন, আর এখন তা অসংখ্য ব্যাঙের ছাতার মত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্রহ্মপুত্রের বুকে যেন বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহাউৎসব শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পূর্বের বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে আর একটি মহল নেমে পড়েছেন এবং বিভিন্ন ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে আবারো অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ চালিয়ে যাচ্ছেন বালু ব্যবসা।
অসংখ্য ড্রেজার ব্রহ্মপুত্রের বুকে চালায় তাদের তাণ্ডব।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পয়েন্টে শ্যালো মেশিন ছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের বুকের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
ফকিরেরহাট এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছু এক ব্যক্তি বলেন, একে তো অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন তার সঙ্গে নদী ভাঙন রোধে যে ব্লোক দেয়া হয়েছে, তার উপর দিয়ে বালু খেকোরা নিজেদের ব্যবসার জন্য রাস্তা বানাইছে আর বাঁধের সড়কও ভেঙ্গে শেষ হচ্ছে।
সূত্র মোতাবেক জানা যায় প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকার বালু বিক্রি করা হয় চিলমারী বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে।
আর প্রতি ঘনফুট বা সিএফটি বালি বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা, যদিও তা তুলতে সিএফটি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা খরচ পড়ছে।
প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি হলেও সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডার একেবারেই শূন্য থাকছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জোড়গাছ থেকে ফকিরেরহাট পর্যন্ত অসংখ্য পয়েন্টে বালু বিক্রির সঙ্গে জড়িত আছে মাছুদ, ইব্রাহিম, রবিন, হারুন, বাবলু, আঃ কাদের, মিন্টু, সুজাসহ অনেকের নাম জানা গেলেও এর নেপথ্যে বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব কিছু প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িত আছেন বলে জানা যায়।
চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করায় গত বছর বর্ষার সময় শত শত বাড়িঘরসহ হাজার হাজার একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।
বালু বিক্রির সঙ্গে দলীয় কেউ জড়িত নেই জানিয়ে উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু হানিফা বলেন, একটি মহল বিএনপি’র সুনাম নষ্ট করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে।
কথা হলে চিলমারী বন্দর থানার ওসি আইসি ইমতিয়াজ কবির জানান, আমাদের লোকবল কম এবং যানবাহন না থাকায় সব স্থানে অভিযান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ কুমার বসাক বলেন, বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং আমরা বালু মহলের জন্য চেষ্টা করছি আশাকরি তা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে জানান তিনি।
এসময়/