ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পাঁচবিবিতে শ্যামলী বালার নামে বিধবাভাতার কার্ড হলেও, টাকা যায় গ্রামপুলিশ জহুরুলের মনোনিত নাম্বারে।

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 21, 2025 ইং
পাঁচবিবিতে শ্যামলী বালার নামে বিধবাভাতার কার্ড হলেও, টাকা যায় গ্রামপুলিশ জহুরুলের মনোনিত নাম্বারে। ছবির ক্যাপশন: পাঁচবিবি ৭নং কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন।
ad728
পাঁচবিবিতে শ্যামলী বালার নামে বিধবাভাতার কার্ড হলেও, টাকা যায় গ্রামপুলিশ জহুরুলের মনোনিত নাম্বারে। 

পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বিধবা ভাতার কার্ডের তালিকায় কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার জহুরুল ইসলামের মনোনিত মোবাইল নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে বিধবাভাতার টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভুক্তভোগি শ্যামলী। ভুক্তভোগির জামাই বলছেন, ৪ থেকে ৫ মাস আগে আমার কাছ থেকে শাশুড়ীর ভোটার আইডি কার্ড নেন। চৌকিদার বলছেন, এক বছর আগে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে অনলাইন করে দিয়েছি। এমন ঘটনাটি ঘটেছে পাঁচবিবি উপজেলার ৭ নং কুসুম্বা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মঠপাড়া গ্রামে।
ভুক্তভোগীর শ্যামলী বালার জামাই সুভাষ চন্দ্র বর্মন বলেন, আমার শাশুড়ী চাতালে কাজ করে। আমার শাশুড়ী বাড়িতে না থাকায় প্রায় ৪ থেকে ৫ মাস আগে চৌকিদার জহুরুল ইসলাম আমাদের গ্রামে এসে বলেন, তোমার শাশুড়ীর ভোটার আইডি কার্ডটি ও ৫০ টাকা দেন। তোমার শাশুড়ীর বিধবা ভাতার কার্ড করা হবে। চৌকিদার জহুরুলের কথা মতে আমি আমার শাশুড়ীর ভোটার আইডি কার্ড ও ৫০ টাকা দেয়। কিন্ত সেই সময়ে মোবাইল নাম্বার চৌকিদারকে দিতে চাইলে তিনি তখন বলেন, মোবাইল নাম্বার পরে নেওয়া হবে। প্রায় ৪ থেকে ৫ মাস পর আমার শাশুড়ী চাতালে কাজ করার সময় বাবু মেম্বার আমার শাশুড়ীকে বলেন, তোমার নামে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে এবং টাকাও তোমার মোবাইল নাম্বারে চলে গেছে। তুমি টাকা পাওনি। তখন আমার শাশুড়ী মেম্বারকে বলেন, আমি তো জানি না। আমি বাড়ি গিয়ে জামাইকে বলবো। রাতে আমার শাশুড়ী বাড়িতে এসে আমাকে বলেন, মোবাইলে বিধবা ভাতার কোনো টাকা আসছে না কি। তখন আমি আমার শাশুড়ীকে বলি আমার মোবাইলে কোনো বিকাশ বা নগদ খোলাই নেই। তাহলে কি ভাবে টাকা আসবে। পরেদিন সকালে আমি ও আমার শাশুড়ীকে নিয়ে বাবু মেম্বারের বাড়িতে যাই। আমরা বাবু মেম্বারকে সব বিষয়ে বললাম। তারপর তিনি একটি লিস্ট বের করে দেখান শ্যামলী বালার নামে বিধবা ভাতা কার্ড হয়েছে। তখন আমাদের বাবু মেম্বার বলেন, এই মোবাইল নাম্বার তোমার নয়। তখন আমরা বলি এই নাম্বারটি আমাদের নয়। এরপর বাবু মেম্বার এই ০১৭৫৯৭৯৯৪৮০ নাম্বার ফোন দিলে ফোনটি রিসিভ করেনি। পরে মেম্বার চৌকিদারের কাছে আমাদের পাঠিয়ে দেন। কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদে এসে জহুরুল চৌকিদারের সাথে আমি কথা বললাম। আমি তখন চৌকিদার জহুরুলকে বললাম ভোটার আইডি কার্ড নেওয়ার সময় তো আমার কাছ থেকে কোন মোবাইল নাম্বার নেননি। তাহলে আমার নাম্বারে কি ভাবে টাকা আসবে। তখন জহুরুল চৌকিদার আমাকে বলেন, তাহলে নাম্বাটি ভুল হয়েছে। তোমার টাকা আছে পাবে। এরপর জহুরুল চৌকিদার আমাকে বলেন, যে আমি মাঝে মধ্যে এই ০১৭৫৯৭৯৯৪৮০ নাম্বারটিতে কথা বলি। জহুরুল চৌকিদার আমাকে আরও বলেন, যেদিন থেকে এই ০১৭৫৯৭৯৯৪৮০ নাম্বারে টাকা ঢুকেছে সেইদিন থেকে আমার ফোনটিও রিসিভ করেনা। তারপর আমাকেও ওই নাম্বারটি দিল কিন্ত নাম্বারে ফোন ঢুকলেও রিসিভ হয়না। এখন আমার প্রশ্ন হলো জহুরুল চৌকিদার যদি মাঝে মধ্যে এই ০১৭৫৯৭৯৯৪৮০ টিতে কথা বলে তাহলে তো জহুরুল চৌকিদার অবশ্যই জানেন ওই নাম্বারটি কার?। 

ভুক্তভোগি বিধবা শ্যামলী বালা বলেন,আমি গেলো কোরবানি ঈদের আগে তিলক বাবুর চাতালে ধান শুকানো কাজ করছিলাম। সেখানে আমাকে দেখতে পেয়ে বাবু মেম্বার এসে আমাকে বলেন, তোমার তো বিধবাভাতার কার্ড করে দিয়েছি,এবং টাকা ও তো তোমার মোবাইল নাম্বারে চলে গেছে। তখন আমি বাবু মেম্বারকে বলি, আমি তো জানি না, বাড়িতে গিয়ে দেখবো।আমি রাতে বাড়িতে এসে আমার জামাইকে বললাম যে মোবাইলে বিধবা ভাতার কোনো টাকা আসছে কি। তখন আমার জামাই বলে আমার মোবাইলে তো কোনো নগদ বিকাশেই খোলো নেই তাহলে টাকা কি ভাবে আসবে?। আমি অশিক্ষিত মানুষ তেমন কিছু জানিনা। আমি জানিনা যে আমার নামে বিধবা ভাতার কার্ড হয়েছে। মেম্বার আমাকে বললে তখন আমি জানতে পারি আমার নামে বিধবা ভাতার কার্ড হয়েছে। 
এবিষয়ে সাংবাদিকরা এই ০১৭৫৯৭৯৯৪৮০ মোবাইল নাম্বাটিতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে ফোনটি রিসিভ হয়না। কিছুক্ষণ পর ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়ায়। আবার পরেদিন ফোন দিলে ফোন হয় কিন্ত রিসিভ হয় না। 

এবিষয়ে ৭ নং কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামপুলিশ (চৌকিদার) জহুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আমি কিছু জানিনা। ওখানে যে নাম্বারটি দেওয়া আছে। নাম্বাটির কোর্ড নাম্বার দেখে মেম্বার মনে করছে এটা আমার নাম্বার। আমি শাওয়ার চাকুরি করি আমাকে ভিক্ষা করে খেতে হয়। আপনার কি বাল করার আছে করেন বলে ফোনটি কেটে দেন।  

এবিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন,আমি কুসুম্বা ইউনিয়নের দায়িত্বে আছি। ভুক্তভোগী অফিসে আসলে নাম্বারটি পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। 

এবিষয়ে কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, শ্যামলী একজন অসহায় নারী তাই আমি নিজে তার বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। কিন্ত শ্যামলীর বিধবাভাতার কার্ডে আমাদের গ্রামপুলিশ জহুরুল তার মনোনিত নাম্বার দিয়েছে। আমি জানার পর বিষয়টি সমাধানের জন্য গ্রামপুলিশ জহুরুল ইসলামকে বারবার তাগাদা দিচ্ছি কিন্ত জহুরুল চৌকিদার আমার কোন কথায় শুনছেনা। 

এসময়/

নিউজটি পোস্ট করেছেন : মোস্তাকিন হোসেন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
বুবলীকে ‘পিনিক’–এ যেমন দেখা যাবে

বুবলীকে ‘পিনিক’–এ যেমন দেখা যাবে