
মো. শাহজাহান বাশার
রাজধানী ঢাকায় অননুমোদিত ব্যাটারিচালিত রিকশার বিস্তার থামানো যাচ্ছে না। বিআরটিএ কিংবা দুই সিটি করপোরেশনের কাছে নিবন্ধন অযোগ্য হলেও দেশের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ চার্জিং স্টেশনের অনুমোদন দিয়েছে। এসব বৈধ স্টেশনকে কেন্দ্র করে এবং তার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি অবৈধ চার্জিং পয়েন্ট—যা ঢাকায় বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরির বড় উৎসে পরিণত হয়েছে।
কার্যকর গণপরিবহন না থাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিম্ন আয়ের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কিন্তু অনুমোদনহীন, লাইসেন্সবিহীন চালক ও যানবাহনের কারণে সড়কে বেড়েছে দুর্ঘটনা, যানজট এবং বিশৃঙ্খলা। তবুও ছড়িয়ে পড়া অবৈধ চার্জিং কেন্দ্রগুলো এসব রিকশার সংখ্যা কমার বদলে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য বলছে, রাজধানীর ১০টি ক্রাইম বিভাগের মধ্যে ৮টিতেই রয়েছে ৩ হাজার ৩০০ বৈধ চার্জিং স্টেশন ও ৪৮ হাজার ১৩৬টি অবৈধ চার্জিং পয়েন্ট। পাশাপাশি রয়েছে ৯৯২টি গ্যারাজ, যেগুলোতেও ব্যাটারি চার্জের সুবিধা দেওয়া হয়।
কোথায় কত অবৈধ চার্জিং পয়েন্ট
মিরপুর বিভাগ: ৩,৯৮৩টি চার্জিং পয়েন্ট, ২৫৯টি গ্যারাজ
ওয়ারি: ৩,৫১৬টি পয়েন্ট, ১৩৬টি গ্যারাজ
গুলশান: ২,৬৪৩টি পয়েন্ট, ১২৮টি গ্যারাজ
উত্তরা: ১,৩০৫টি পয়েন্ট, ৭২টি গ্যারাজ
মতিঝিল, লালবাগ, তেজগাঁও, রমনা—সব মিলিয়ে হাজারো পয়েন্ট
সব মিলিয়ে এই চার্জিং নেটওয়ার্ক একটি সমান্তরাল অরাজক খাত তৈরি করেছে।
সরকার চার্জিং স্টেশনের জন্য ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করেছে ১০ টাকা। কিন্তু বেশিরভাগ গ্যারাজ বৈধ মিটারের পাশাপাশি স্ট্রিটলাইট বা মেইন লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করছে। রাতের অন্ধকারে প্রতিটি অটোরিকশা ১০০–১৫০ টাকায় চার্জ নেওয়ার নিয়ম চলছে।
গ্যারাজ মালিকদের হিসাব অনুযায়ী—
একটি রিকশা চার্জে খরচ হয় ৭০–১০০ টাকা
কিন্তু অনেক গ্যারাজে ৫০–৬০ টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ১০০টিরও বেশি রিকশা চার্জ দেওয়া হয়
ফলে বৈধ মিটারের আড়ালে চলছে কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা
একটি গ্যারাজের দৈনিক আয় কয়েক হাজার টাকা হলেও বছরে পুরো ঢাকাজুড়ে লেনদেন হয় প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা, যার বড় অংশই বিদ্যুৎ চুরি।
রূপনগর, শেওড়াপাড়া, পল্লবী, কল্যাণপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যারাজের বিস্তার সবচেয়ে বেশি। অনেক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর এখন গ্যারাজে পরিণত হয়েছে।
আগে ২৫ হাজার টাকা ভাড়ায় পাওয়া ফ্লোর এখন গ্যারাজ ভাড়া ৪০ হাজার টাকায় চলে যাচ্ছে
গ্যাস–পানি–অন্যান্য বিল নেই; শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেই ব্যবসা জমজমাট
বৈদ্যুতিক খুঁটি, স্ট্রিটলাইট, ঝুলন্ত তারের সঙ্গে রিকশা সারিবদ্ধভাবে চার্জ করার দৃশ্য এখন প্রতিদিনের চিত্র।
ডেসকো–ডিপিডিসি দাবি করছে, নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, অনেক চার্জিং স্টেশনকে ভুলভাবে বাণিজ্যিক সংযোগ দিয়েছে ডেসকো।
দক্ষিণ সিটি বলছে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু হয়নি। ফলে সব রিকশাই অবৈধভাবে চলছে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে—ব্যাটারিচালিত তিনচাকার যানবাহন নিয়ন্ত্রণে স্পষ্ট জাতীয় নীতিমালা নেই ,এজন্য ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা ধ collapsing এর দিকে হচ্ছে ,অবৈধ চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত করেছে‘ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনস ২০২৫’
যেখানে রয়েছে—বাধ্যতামূলক নিবন্ধন,ফিটনেস সার্টিফিকেট,ড্রাইভারের লাইসেন্স,গতিসীমা নির্ধারণ,মহাসড়কে নিষেধাজ্ঞা ,উৎপাদনকারীদের অনুমতি ,অবৈধ চার্জিং স্টেশন বন্ধে অভিযান
গাইডলাইনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং অনুমোদন পেলেই গেজেট প্রকাশ হবে।