
মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের অন্যতম বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যাদের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে, সেই দলটি আজ অভ্যন্তরীণ কিছু মতবিরোধ ও শৃঙ্খলা সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে একাংশ স্থানীয় নেতা-কর্মীর পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়া, সামাজিক মাধ্যমে অশালীন বক্তব্য ও শালীনতার সীমা লঙ্ঘন—সব মিলিয়ে দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
তবে এই সংকটের মধ্যেও আশার কথা হলো—দলীয় ঐতিহ্য, সংগ্রামের ইতিহাস এবং গণমানুষের প্রত্যাশা বিএনপিকে আবারও ঐক্যের পথে ফিরিয়ে আনতে পারে—এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন ইস্যু, পদ-পদবী বণ্টন ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ভিন্ন অবস্থান নিতে দেখা গেছে কিছু স্থানীয় নেতাকর্মীকে। এতে করে—দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে সাধারণ কর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে ,ভোটারদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে,দলের অভ্যন্তরে গ্রুপিং ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঝুঁকি বেড়েছে
রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকতেই পারে—এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই মতভিন্নতা যখন প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নেয়, তখন সেটি শুধু দল নয়, দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকেও দুর্বল করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে দলের আন্দোলন-সংগ্রামের মূল দিকনির্দেশক। অথচ দুঃখজনকভাবে কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে অশ্লীল মন্তব্য ও শালীনতাবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে—যা শুধু দলীয় আদর্শের পরিপন্থী নয়, বরং রাজনৈতিক শিষ্টাচারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
দলীয় একাধিক সিনিয়র নেতা বিষয়টিকে “অনভিপ্রেত ও দলীয় আদর্শবিরোধী” বলে উল্লেখ করে ইতিমধ্যেই কঠোর অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে—তারা বিভাজন নয়, ঐক্য চান,তারা ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি নয়, আদর্শের রাজনীতি চান,তারা চান দল আবারও জনগণের আশা-ভরসার প্রতীক হিসেবে দাঁড়াক
একজন প্রবীণ বিএনপি কর্মীর ভাষায়—“বিএনপি মানে আমাদের আবেগ, আমাদের অস্তিত্ব। আমরা চাই না দল ভেতর থেকে দুর্বল হোক।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সামনে এখন তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ—দলীয় শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ,তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয় জোরদার ,ভাষা ও আচরণে শালীনতা নিশ্চিত করা
এই তিনটি বিষয়ে দল যদি দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে, তবে—অভ্যন্তরীণ বিভাজন কমবে ,জনগণের আস্থা ফিরবে ,নির্বাচনী রাজনীতিতে বিএনপি আবারও শক্ত অবস্থানে ফিরে আসতে পারবে
দলের ভিতরে ইতোমধ্যেই সাংগঠনিক পুনর্গঠন, শোকজ, সতর্কবার্তা ও আলোচনা-সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
রাজনীতি মানেই মতপার্থক্য থাকবে, দ্বন্দ্ব থাকবে। কিন্তু সেই দ্বন্দ্ব যদি দলকে দুর্বল করে ফেলে—তবে তার সুযোগ নেবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। বিএনপির ইতিহাস বলে—এই দল বহুবার সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজও সেই সামর্থ্য বিএনপির আছে।
দেশের সাধারণ মানুষ, তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের একটাই প্রত্যাশা—“বিএনপি আবার ঐক্যবদ্ধ হোক, শক্তিশালী হোক, গণমানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠুক।”