
জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণার দাবিতে ছাত্রশিবির সভাপতির হুঁশিয়ারি।
প্রতিবেদন: মো. শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টারঃ
অবিলম্বে “জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রোক্লেমেশন” ঘোষণার দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে দেওয়া এক জোরালো বক্তব্যে তিনি বলেন,
“আপনারা স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় বসেননি। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আমাদের সামনে সংবিধান আর হাইকোর্ট তুলে ধরে কোনো লাভ নেই।”
জাহিদুল ইসলাম বলেন,“জুলাই মাসের মধ্যেই শহীদ ও গাজীদের স্বীকৃতি দিয়ে ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণা করতে হবে। এই ঘোষণার মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ তৈরি হবে। আমরা আর অপেক্ষা করব না।”
তার বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ছাত্রশিবিরের অনাস্থা এবং দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ছাত্র জনতার ভেতরে ক্ষোভ জমেছে।
ছাত্রশিবির সভাপতি আরও বলেন,“গত ১৫ বছর ধরে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাস ও মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা আজো ব্রিটিশ আমলের দাসত্বমূলক কাঠামোতে আবদ্ধ। পাশ্চাত্য মতাদর্শ ও পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের মূল্যবোধ চাপিয়ে দিয়ে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়কে ধ্বংস করা হচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন,“এতগুলো সংস্কার কমিশন গঠিত হলেও শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। অথচ শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। একটি আদর্শিক ও ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।”
সমাবেশ থেকে তিনি দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন,
“সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক টালবাহানা ও খুনের রাজনীতি ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সতর্ক করছি—অতিসত্বর শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করুন। আর দেরি চলবে না।”
জুলাই মাসের তাৎপর্য তুলে ধরে ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন,“জুলাই ছিল কষ্টের, প্রতিবাদের এবং বিজয়ের মাস। কিন্তু শহীদ পরিবারগুলোর চোখে আজো জল। তারা বিচারহীনতার গ্লানি বইছে। শহীদদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি আজো মেলেনি। এর চেয়ে লজ্জাজনক কিছু হতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন,“আমরা নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি—যেখানে ইসলামী মূল্যবোধ, জাতীয় আদর্শ ও স্বাধীনতার চেতনা থাকবে। এজন্য প্রয়োজন একটি আদর্শিক রাষ্ট্র কাঠামো, আদর্শিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং আদর্শিক নেতৃত্ব।”
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এককভাবে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এই সমাবেশে ছাত্রশিবির সভাপতির বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন, অন্যদিকে “জুলাই প্রোক্লেমেশন” ঘিরে নতুন রাজনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার ও শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি শুধু ছাত্রশিবিরের নয়, সার্বজনীন একটি আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। পাশাপাশি শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি অবিচার ও বিচারহীনতার প্রসঙ্গ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
এসময়/