
ভুয়া পরিচয়ে চাঁদনী আক্তার মায়ার প্রতারণা।
মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীতল গ্রামের চাঁদনী আক্তার মায়া, পিতা রহমান নিয়া—প্রথমে এক সাধারণ নারীর পরিচয়ে পরিচিত হলেও আজ তিনি স্থানীয়দের চোখে প্রতারণার প্রতীক। বিয়ের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের কাবিন আদায়, পরবর্তীতে তালাক ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে একের পর এক পরিবারকে নিঃস্ব করেছেন এই নারী।
বর্তমানে সামাজিকভাবে তাকে ঘৃণা ও আতঙ্কের চোখে দেখছে এলাকাবাসী। ভুক্তভোগীরা বিচার চেয়ে দারস্থ হয়েছেন আদালতের কাছে, কিন্তু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের অভিযোগে এখনও পর্যন্ত সুষ্ঠু বিচার থেকে তারা বঞ্চিত।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, চাঁদনী আক্তার মায়া ভিন্ন নামে, যেমন—চাঁদনী আক্তার, মায়া, চাঁদনী মায়া ইত্যাদি পরিচয়ে অন্তত পাঁচজন পুরুষকে বিয়ে করেছেন। প্রতিবারই নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এবং মোটা অঙ্কের কাবিন দাবি করেন। অথচ বাস্তবতা হলো, তিনি বহু আগেই বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জননী।
বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মনোমালিন্য সৃষ্টি করে বিচ্ছেদ ঘটান এবং সংশ্লিষ্ট স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। অনেকেই মামলার ভয়ে আত্মগোপনে, কেউ পরিবার হারিয়ে রিকশাচালক, আবার কেউ ঋণে ডুবে নিঃস্ব।
তার বিয়ের তালিকায় আছেন—প্রথম স্বামী: মুহাম্মদ কাউসার আহমেদ ভূঁইয়া (ভদ্র শিয়া, ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা)দ্বিতীয় স্বামী: আশিকুর রহমান (মৌলভীপাড়া, কুমিল্লা সদর) তৃতীয় স্বামী: আরাফাতুল ইসলাম সাগর (মক্রমপুর, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা) চতুর্থ স্বামী: নুরনবী (শ্রীপুর ইউনিয়ন, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা) বর্তমান স্বামী: জনি (ঝাউতলা, কুমিল্লা)
চাঁদনীর ছলনার জালে পুরুষদের পাশাপাশি নারী ভুক্তভোগীর সংখ্যাও কম নয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি একাধিক নারীর স্বামীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সংসার ভাঙার ষড়যন্ত্র করেছেন।
ভুক্তভোগী সিনথিয়া আরাফাত নিপা (ধর্মপুর রেলগেইট, কুমিল্লা) বলেন,
“আমার ১৮ বছরের সংসার ভেঙে গেছে। তিন সন্তান নিয়ে পথে বসেছি। চাঁদনী আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে।”
অন্য এক ভুক্তভোগী, আখি আক্তার (গ্রাম: পাইকপাড়া, জেলা: কুষ্টিয়া) বলেন,
“চার সন্তানসহ আমি পথে। মামলা, হুমকি আর মানসিক চাপের মধ্যে দিন কাটে। সমাজে মুখ দেখানোর উপায় নেই।”
প্রথম স্বামী মোহাম্মদ কাউসার আহমেদ ভূঁইয়া জানান, তাঁর দুই সন্তানকে নিজের কাছে রেখে চাঁদনী আক্তার নকল জন্মসনদ তৈরি করেছেন, যাতে বাচ্চাদের জন্মপিতা হিসেবে কাউসারের নাম না থাকে। পরে সন্তানদের নিজের কাছে রেখে নগদ অর্থ আদায়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন।
এ বিষয় নিয়ে তিনি দীর্ঘ এক বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এখনো সন্তানের অভিভাবকত্ব ফিরে পাননি।
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার অনুসন্ধানে নামেন তালাশ ক্রাইম দৃষ্টি পত্রিকার সাংবাদিক দ্বীন ইসলাম। তার বিরুদ্ধেও চাঁদনী আক্তার মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেন বলে জানা যায়। একইসঙ্গে, অভিযোগকারীদেরকে দমন-পীড়নের হুমকিও দেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া-এর কাছে মন্তব্য চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। তার এই নীরবতা প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁদনী আক্তারের পেছনে রয়েছেন কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। যার কারণে বহু মামলা ও অভিযোগ সত্ত্বেও তিনি আক্ষরিক অর্থেই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
চাঁদনীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একাধিক মামলা বর্তমানে কুমিল্লা দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। আইনজীবীরা বলেন, প্রমাণপত্র উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ হলে চাঁদনীর প্রতারণার পুরো চিত্র উন্মোচিত হবে।
ভুক্তভোগীরা আদালতের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন,“আমরা রাজনৈতিক প্রভাব নয়, ন্যায়বিচার চাই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ে কেউ যেন সাধারণ মানুষের জীবন ধ্বংস করতে না পারে।”
চাঁদনী আক্তার মায়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য এই প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এই প্রতিবেদনটি একটি অনুসন্ধানভিত্তিক রিপোর্ট। এতে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। তদন্ত ও আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে।
চাঁদনী আক্তারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রশাসনিক প্রভাব ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক আরও বিস্তৃত ধারাবাহিক প্রতিবেদন শিগগিরই প্রকাশিত হবে।
এসময়/