
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অন্ধকার সাম্রাজ্য।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
‘স্যুটেড-বুটেড’ দুর্নীতির পাহাড়ে দণ্ডায়মান এক পুলিশ কর্তা!
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এখন আর জননিরাপত্তার প্রতীক নন, বরং হয়ে উঠেছেন ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ জগতের প্রতিচ্ছবি। যিনি একসময় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই মানুষটির বাসা থেকে এখন উদ্ধার হচ্ছে একেকটি ‘অর্থের জঞ্জাল’।
সম্প্রতি গুলশানের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যে জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে, তা যেন চোখ কপালে তোলার মতো।
ফ্ল্যাটের মালামাল দেখে তদন্ত কর্মকর্তারাও স্তব্ধ: শার্ট – ১২২টি; প্যান্ট – ২৬৬টি; ব্লেজার – ৩০টি; স্যুট – ৮টি; টি-শার্ট – ৭২২টি; পাঞ্জাবি – ২২৪টি; শাড়ি - ৪৯৪টি; থ্রিপিস – ২৫০ সেট; সালোয়ার-কামিজ – ৪৯৬টি; লেডিস টপস – ৬২২টি; লেডিস প্যান্ট – ৩৫৫টি; নাইট ড্রেস – ৫৮টি; সানগ্লাস – ৩৪টি; জুতা-কেডস-স্যান্ডেল মিলিয়ে – ১৬১ জোড়া; বেডশিট – ১০৯টি; শীতের জামা – ১৩২টি; লেহেঙ্গা – ১৬টি।
তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, একটি পরিবার এমন মালামাল সাধারণত ২০-২৫ বছরে ব্যবহার করতে পারে। অথচ একটি ফ্ল্যাটে এমন বিশাল সংখ্যক বিলাসবহুল পোশাক-আশাক, মহিলাদের সাজ-সজ্জার জিনিসপত্র এবং দামি ব্র্যান্ডের সামগ্রী রাখার পেছনে কী আছে, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগের খতিয়ান: এক এক করে সামনে আসছে ‘বেনজীরের সাম্রাজ্য’।
অবৈধ সম্পদের পাহাড়ঃ দুদক সূত্রে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের নামে থাকা শত শত বিঘা জমি, একাধিক ফ্ল্যাট, জমকালো ফার্ম হাউজ, ৫ তারকা মানের রিসোর্ট এবং ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকা, সবকিছুই বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে সম্পদ হস্তান্তরঃ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক ভুয়া প্রতিষ্ঠান গঠন করে সেগুলোর মাধ্যমে দুর্নীতির টাকা বৈধ করা হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান চালু না করেই জমি কিনেছে, টাকা ঘুরিয়েছে, এবং কর ফাঁকি দিয়েছে।
পুলিশ বাহিনীর কেনাকাটায় কমিশন বাণিজ্যঃ আইজিপি থাকাকালে পুলিশের লজিস্টিক সাপ্লাই, গাড়ি ক্রয়, অস্ত্র কেনাকাটাসহ নানা খাতে কমিশন বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ঘনিষ্ঠ একাধিক ঠিকাদার এবং ব্যবসায়ী এখন বিদেশে পলায়নপর।
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সুবিধাঃ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বেনজীর এই সম্পর্ককে পুঁজি করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও নিজের স্বার্থে কাজ করেছেন। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ, ট্রান্সফার ও পদোন্নতির বিনিময়ে সুবিধা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
গোপন সম্পদের তালিকা লুকানোর অপচেষ্টাঃ দুদকের হঠাৎ অভিযানের আগেই বেনজীর পরিবার বহু মূল্যবান আসবাবপত্র, ব্যাংক ডকুমেন্ট, ওয়ার্ডরোব ক্লিয়ার করে ফেলে। সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে, রাতের আঁধারে গাড়িভর্তি করে মালামাল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
জবাব চায় জাতি!
বাংলাদেশের ইতিহাসে যদি বড় দুর্নীতির তালিকা তৈরি করা হয়, তাহলে বেনজীর আহমেদ নামটি এখন শীর্ষেই থাকবে। একটি রাষ্ট্র যখন তার আইনরক্ষককেই অপরাধে জড়িত অবস্থায় পায়, তখন তা পুরো ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এখন প্রশ্ন একটাই- “যে মানুষটি অন্যদের আইনের আওতায় আনতেন, তাকেই এখন কে আইনের আওতায় আনবে?”
সময়ের দাবি- চূড়ান্ত বিচারেরঃ এ ধরনের শক্তিধর, রাজনৈতিকভাবে সুরক্ষিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো নমনীয়তা নয়। কেবল সম্পদ বাজেয়াপ্ত নয়, বেনজীর আহমেদকে বিশেষ দুর্নীতি ট্রাইব্যুনালে দাঁড় করিয়ে জনগণের সামনে উদাহরণ তৈরি করতে হবে।
এসময়/
(সুত্র- অনলাইন)।