
হাকিমপুরে চিকিৎসককে মারধর ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিরুদ্ধে।
হিলি, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের হিলিতে হাসপাতাল থেকে রোগীর ছাড়পত্র দেওয়াকে ঘিরে মশিউর রহমান নামের এক চিকিৎসককে মারধর করে পিটিয়ে আহত করাসহ মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুলাহ আল মামুন নামের এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে দেড়ঘন্টা কার্যক্রম বন্ধ রাখেন হাসপাতালে কর্মরতরা। ঘটনাকে ঘিরে চিকিৎসকের মাঝে আতংক বিরাজ করছে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কতৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সহযোগী সংগঠন হাকিমপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়কের দায়ীত্বে রয়েছেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের এক স্টাফের মাধ্যমে সেই মোবাইল ফেরত দেয় সে।
হাসপাতালে থাকা রোগীর স্বজন নাসরিন আকতার বলেন,ডাক্তার এসে ওয়ার্ডের সব রোগীকে দেখার পর যখন কেবীনে থাকা রোগীকে দেখে নিচে নেমে যায় সেসময় কেবিনের লোক প্রচুর চিৎকার চেচামেচি করছিল। ডাক্তারকে বাপ করে ডাকাবো চাকুরি খাবো পিটাবো এই ধরনের হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এসব শুনে আমি নিচে গিয়েছিলাম কিছুক্ষন পর এসে শুনি ডাক্তারকে নাকি মারধর করেছে সেসব নিয়ে নিচে গোলমাল চলছে।
হাসপাতালের ২নং কেবিনে থাকা রোগীর স্বজন ফাইম বাবু বলেন,আমার বাবাকে দেখার পরে পাশের ৩নং কেবিনে ঢোকে ডাক্তার। এসময় সেখানে থাকা রোগীকে বলে তোমার সময় শেষ তুমি বাড়ি চলে যাও আবার কিছুদিন পরে আসো বা অন্য কোন হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে। এই নিয়ে ডাক্তার ও রোগীদের মাঝে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখি। পরে আমি নিচ থেকে ঔষধ নিয়ে এসে শুনি তারা ডাক্তারকে মারধর করেছে যা মোটেই ঠিক করেনি।
হাসপাতালে কর্মরত ফয়সাল হোসেন বলেন,দুপুর দেড়টার দিকে স্যার নামাজের উদ্দেশ্যে বাহির হচ্ছেন ঠিক এমন সময় কয়েকজন ব্যাক্তি তাকে রুম থেকে বাহিরে আসতে বলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই কয়েকজন ব্যাক্তি গিয়ে স্যারকে মুখে ঘুষি ও শরীরে লাথি মারতে থাকে। সাথে সাথে আমরা গিয়ে সেখানে তাদেরকে আটকানোর চেষ্টা করি। কোনভাবেই তাদেরকে থামানো যাচ্ছিলনা জরুরী বিভাগ থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালের সামনে নিয়ে ৪/৫জন মিলে তার গলা চেপে ধরে। আমি আটকাতে গিয়ে তাদের হামলায় আহত হয়।
হাসপাতালে কর্মরত উপসহকারি কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার রুহুল আমিন বলেন,তারা আমাদের চিকিৎসককে মারধর করে আবার তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এঘটনায় আমরা যারা কর্মরত ছিলাম সকলেই আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ি। এই ঘটনায় জরুরী সেবা বাদে সকল ধরনের সেবা দেড়ঘন্টার মত বন্ধ রাখা হয়। আমরা তো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এইভাবে যদি অতর্কিতভাবে হামলা হয়। ছয়মাস আগেও আমাদের আরেক স্যারের উপর হামলা হয়েছিল তার কয়েকমাস না যেতেই আজকে আবার একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটলো। এই অবস্থার মধ্যে আমরা আমাদের দায়ীত্ব পালন করবো কিভাবে। আমাদের নিজেদেরই যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে কিভাবে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।
ভুক্তভোগী চিকিৎসক মশিউর রহমান জানান,উমর ফারুক ও সুখি নামের দুজন রোগী আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বেশ ১৪দিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩নং কেবিনে থেকে চিকিৎসাধীন নিচ্ছিলেন। তাদের চিকিৎিসা চলমান আছে তাদের বড়ধরনের কোন সমস্যা নেই। আজ সকালে রাউন্ডে গিয়ে অবস্থা ভালো হওয়ায় তাদের বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলা হয়। সেই লক্ষ্যে তাদের দুজনকে ছুটি দেওয়ার কথা জানালে তারা রেগে যায় খারাপ ব্যবহার করে ছুটি নিবেনা বলে জানায়। এরপরে আমাকেসহ নার্সদের হুমকি ধামকি প্রদান করে। পরবর্তীতে দুপুর ১২টার দিকে মামুন নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হুমকি দেয় তাকে ছুটি না দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি সেই রোগীকে ছুটি দিয়ে দেয়। দুপুর দেড়টার একটু পরে জরুরী বিভাগের সামনে পেয়ে মামুন তার সহযোগীরা আমার উপর আক্রমন করে। তারা মুখে ঘুসি মারে শরীরে লাথি মারে পরবর্তীতে আমার গলা চেপে ধরে। এসময় হাসপাতালে কর্মরতরা এগিয়ে আসলে চলে যায়। তবে এসময় তারা আমার ব্যবহৃত মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আশরাফুল ইসলাম বলেন,ভর্তি রোগীকে ছুটি দেওয়াকে কেন্দ্র জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক মশিউর রহমানের উপর হামলা চালিয়ে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্চিত করে। এতে করে আমরা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকসসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সেই সাথে এই ঘটনাকে ঘিরে সকলেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ। হাসপাতালে মাত্র ২জন চিকিৎসক দিয়ে উপজেলার সকল মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমন সময়ে এই ধরনের হীনমন্যতামুলক আচরন ও আক্রমন কোনভাবেই সহ্য করার মত নয়। আমরা এই ঘটনার আশু প্রতিকার ও যথাযথ বিচার প্রত্যাশা করছি। এবিষয়ে সিভিল সার্জন স্যারকে অবগত করা হয়েছে সেই সাথে এবিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
হাকিমপুর পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মামুন বলেন,ডাক্তার আমাকে ধাক্কা দেয়, তখন এই ঘটনা ঘটে। তবে আমি তাকে মারিনি, আমার সাথের লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। উনার মোবাইল ফোন ঘটনার পরপরই ফেরত দেওয়া হয়েছে।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন,আজ দুপুরের দিকে হাসপাতাল থেকে ডাক্তার পরিচয়ে একজন ফোন করে বলেন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ডাক্তারকে মারপিট করা হচ্ছে। সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে মোবাইল টিম পাঠানো হয়। কিছুক্ষন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি জানালে আমি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় ডাক্তারদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখতে পায়। তবে এবিষয়ে যদি ডাক্তাররা কোন ধরনের আইনগত সহায়তা চান বা কোন অভিযোগ দেন তাহলে আমরা বিধি মোতাবেক সার্বিক আইনগত সহায়তা করা হবে।
এসময়/