উত্তরা থেকে শিবলীঃ
রাজধানীর উত্তরায় রাইদা বাস চাপায় গৃহকর্মী গেনেদা খাতুন (৫৪) এর মৃত্যুর ঘটনায় আগামী সাত দিনের মধ্যে ঢাকার সব রুটে রাইদা পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ ও গৃহকর্মীকে রাস্তায় পিষে মারায় জড়িত বাস চালক, হেলপার ও রাইদা বাস মালিকের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তার স্বজনরা।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে দশটায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা হাউস বিল্ডিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয় নিহত গেনেদা খাতুনের আত্মীয়-স্বজনসহ প্রায় দুই শতাধিক এলাকাবাসী।
উত্তরা সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে এসময় বক্তারা রাইদা পরিবহনের বাস চালকদের বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে মানুষ মারার অভিযোগ অভিযোগ তুলে বলেন, রাইদা বাস চাপায় ঢাকাতে এ পর্যন্ত ২০ জনের বেশি যাত্রী-পথচারীর মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া উত্তরা থেকে যাত্রীবাড়ি রুটে রাইদা পরিবহন চালকদের ওভারটেকিং ও বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় চরম ঝুঁকিতে এই রুটের সাধারণ যাত্রীরা। আর তাই নিহত গেনেদা খাতুনকে বাস চাপায় মারার পেছনে জড়িত বাস চালক-হেলপার ও মালিকের ফাঁসির দাবিসহ নিহত পরিবারের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্যে নিহত গেনেদা খাতুনের মেয়ে নিলোফা ইয়াসমিন বলেন, ওরা আমার মাকে মাইরা ফালাইয়াছে। এর জন্য রাইদা পরিবহনের ওই দুই বাস চালক, হেলপার আর রাইদার মালিক একমাত্র দায়ী। আমি আমার মায়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
এ সময় গেনেদা খাতুনের স্বজন সাইফুল ইসলাম বলেন, তাকে নির্মমভাবে গাড়ি চাপার সাথে শুধু চালক-হেলপাররা জড়িত নয়। এই মৃত্যুর সাথে রাইদা বাস মালিক কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বাস মালিকরাই টাকা কামাতে অদক্ষ চালকদেরকে স্ট্যায়ারিংয়ে বসিয়েছে।
আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঢাকায় রাইদা পরিবহনের সব বাস বন্ধ করতে হবে। তা নাহলে আমরা আবার রাস্তায় নেমে আসব। এ সময় হাউস বিল্ডিং মোড়ে রাইদা পরিবহনের একাধিক বাস আটকে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন নিহত গেনেদা খাতুনের পরিবারের স্বজনেরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসাইন বলেন, রাইদা বাসের বেপরোয়া গতিতে উত্তরায় যে নারী মারা গেছে তা খুবই বিভৎস ছিল। আমরা ঘটনাস্থল সেদিনই পরিদর্শন করেছি। রাইদা বাস ওই নারীর মাথা পিষে দিয়েছে। অবশ্যই এর কঠিন বিচার হওয়া উচিত।
বক্তব্যে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি মো. ফিরোজ জামান বলেন, রাস্তায় রাইদা পরিবহন উত্তরবাসীর জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাসের চাপায় গেনেদা খাতুনের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। আমরা চাই উত্তরার মতো আবাসিক এলাকায় যেন কোন বাস স্ট্যান্ড না থাকে। এতে আমাদের বসবাসের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত উত্তরা জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মাহিম তালুকদার বলেন, উত্তরায় প্রতিনিয়তই সড়ক দূর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে আমরা ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানাই। গৃহকর্মী গেদেজা খাতুনসহ সকল প্রাণহানির বিচার করতে হবে।
বক্তব্য নিহত গেনেদা খাতুনের স্বামী আব্দুল গণি বলেন, আমার স্ত্রী সকাল বেলা কাজে যাইতেছিল। চৌরাস্তার মোড়ে রাইদা পরিবহনের দুই বাস এসে আমার স্ত্রীর জীবন কাইড়া নিছে। তিনি জানান, এই ঘটনার সাথে রাইদা পরিবহনের বাস মালিকও জড়িত। বাস মালিকরাই তো ওগোর মতো আনারি ড্রাইভারগোর কাছে বাস তুইল্যা দিছে। আমি ওই দুই বাস ড্রাইভার-হেলপার আর বাস মালিকগোর ফাঁসি চাই।
উল্লেখ্য যে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল ৯টার দিকে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টর চৌরাস্তা এলাকায় রাইদা পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে গৃহকর্মী গেনেদা খাতুনের মৃত্যু হয়। তিনি রাস্তা পার হওয়ার জন্য উত্তরা ১১নং সেক্টর চৌরাস্তা মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সেসময় যাত্রী আগে নেয়ার প্রতিযোগিতায় বেপরোয়া গতিতে রাইদা পরিবহনের দুই বাসের প্রথমটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১২-৩৪১৭) গেনেদা খাতুনকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে পেছনে থাকা অপর রাইদা বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-১৫২২) চাকা গেনেদা খাতুনের মাথা পিষ্ট করে।
ফলে মাথার খুলি ভেঙ্গে মগজ বেরিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান গেনেদা বেগম। এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে ঘাতক রাইদা বাস পরিবহনের কয়েকজনকে আসামী করে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেছেন নিহতের স্বামী মো. আব্দুল গনি।
এসময়/