ওষুধ চুরি ও নানান অনিয়মের প্রতিবাদে নড়াইলের কালিয়ায় মানববন্ধন।
নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইলের কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওষুধ চুরিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন হয়েছে। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ মানববন্ধন হয়।
‘ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ’ ব্যানারে হওয়া এই মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক স ম ওয়াহিদুজ্জামান, পৌর বিএনপির সভাপতি শেখ সেলিম হোসেন, পৌর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব শেখ মনিরুজ্জামান, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক স ম রাকিবুজ্জামান, স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান হোসেন, রবিউল সর্দার প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত কয়েকজন কর্মচারী অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা কৌশলে হাসপাতাল থেকে দামি ওষুধ চুরি করে নিয়ে যান। আর সাধারণ রোগীরা এসে ঠিকমতো ওষুধ পান না।
গতকাল হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের এক কর্মী ওষুধ চুরি করতে গিয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিকের কাছে ধরা পড়েন।
এ ছাড়া কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে দীর্ঘদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধের টেন্ডার হয় না। যার ফলে জনগণ ওষুধসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সম্প্রতি অনিয়মের মাধ্যমে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা নিয়ে আউটসোর্সিংয়ে আটজন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা লিটন সিকদার বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে অস্ত্রোপচারের জন্য এই হাসপাতালে এনেছিলাম। সেখানে কর্মচারীরা অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। সিজার করতে আসা প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে একই কাজ করে।’
মানববন্ধনে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক স ম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘এসব ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করি, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন করার আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
আর আউটসোর্সিংয়ে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, পুনরায় সেসব পদে যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শোয়াইব বলেন, তিনি যোগদানের আগে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পদে কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। এ কারণে অফিসের কর্মীদের বেতন, ওষুধের টেন্ডারসহ অর্থনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়নি ওই সময়। যোগদানের পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। পরে নিয়মানুযায়ী অন্য প্রক্রিয়ায় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। এখন পর্যাপ্ত ওষুধ আছে।
আর আউটসোর্সিংয়ের কর্মী নিয়োগ সিভিল সার্জন অফিস থেকে। এখানে তাঁর কোনো হাত নেই।
ওষুধ চুরির ব্যাপারে মোহাম্মদ শোয়াইব বলেন, ‘বিষয়টি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর আজ থেকে আমাদের স্টাফদের ওষুধ দেওয়া আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। কারও প্রয়োজন হলে যাচাই-বাছাই করে তাঁকে পরিমাণমতো ওষুধ দেওয়া হবে। এ ছাড়া অন্যান্য অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মো. আবদুর রশিদ বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের নিয়োগ হয় ঠিকাদারের মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় আমি বা আমার অফিসের কেউ কোনো ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত নন। স্বচ্ছতার সঙ্গে আমরা আমাদের কাজ করেছি। তবে ঠিকাদার যদি কারও থেকে কোনো লেনদেন করে থাকেন, সে ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ পেলে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হবে।’
এসময়/