যশোর-৫: জামায়াতের গাজী এনামুল, বি এনপির ইকবাল-মুছা মাঠে।
মালিকুজ্জামান কাকাঃ
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের এমপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক। তিনি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সু পরিচিত। সুবক্তা হিসেবে দলীয় পরিসরের বাইরেও তার পরিচিতি বেশ। সহযোগিতাকারী এবং সহমর্মী হিসাবেও তার সুনাম বেশ।
ভোটের মাঠে ব্যাপক গন সংযোগ করছেন মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মুছা। জনতার জোয়ার কাজে লাগাতে চাইছেন এরা।
যশোর-৫। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি যশোর জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ৮৯নং আসন। ৪৪৪.৭৩ বর্গকিমি (১৭১.৭১ বর্গমাইল) আয়তনের বিশাল উপজেলা মনিরামপুর। এই আসনে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫১৮ জন।
জনতার মধ্যে পুরুষ ৫০.১ শতাংশ এবং মহিলা ৪৯.৯ শতাংশ। মুসলমান ৭৯.২ শতাংশ, হিন্দু ২০.৬২ শতাংশ এবং অন্যান্য ৫.১৮ শতাংশ। গড় সাক্ষরতা ২৮.৯ শতাংশ। যার মধ্যে শতকরা ৩৭.২জন পুরুষ এবং ২০.৬ জন মহিলা। তবে এখানে ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস শোনা যায়। এখানে ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কমরেড আসাদ-শান্তি-মানিক-তোজো-ফজলুর মৃত্যুর স্বাক্ষী মনিরামপুর। রয়েছে নদ মৃত প্রায় হরিহর নদী, কপোতাক্ষ নদ, মুক্তেশ্বরী নদী, শ্রী নদী।
এই আসনের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মুছা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ইফতেখার সেলিম অগ্নি, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাড. গাজী এনামুল হক, জমিয়তে উলামা ইসলামের সহকারী মহাসচিব ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের ছেলে মাওলানা রশিদ আহমাদ, ইসলামী আন্দোলনের ইবাদুল ইসলাম মনু, জাগপার কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও যশোর জেলা প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিজামউদ্দিন অমিত। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা যশোরের মনিরামপুরের ১৭ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৫ সংসদীয় আসন।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য এমপি হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির আফসার আহমদ সিদ্দিকী এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মুহাম্মদ ওয়াক্কাস এমপি হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খান টিপু সুলতান এম পি নির্বাচিত হন। ২০০১ জামাত-ই-উলামাই ইসলামের মুহাম্মদ ওয়াক্কাস এমপি হন। ২০০৮ সালে আবারো আওয়ামীলীগ প্রার্থী নৌকার খান টিপু সুলতান এমপি হন। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পর ২০১৮ সালে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি হন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইয়াকুব আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে এম পি হন।
জমিয়তে উলামা ইসলামের সহকারী মহাসচিব মাওলানা রশিদ আহমাদ জানান, বিএনপির নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোটে আছি। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাংগঠনিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। এ আসনে আমার বাবা তিনবার সংসদ-সদস্য ছিলেন। সাবেক হুইপ, প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সততার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। মনিরামপুরের মানুষের কাছে আমার পরিবার পরীক্ষিত। জোটের শরিক হিসাবে মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হতে আশাবাদী।
বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মুছা বলেন, দলের মনোয়ন প্রত্যাশী। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে। সেটা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করব। তিনি আরও বলেন, জোটের শরিক উলামায়ে ইসলামের সাংগঠনিক ভিত মজবুত নয়। এককভাবে ভোট করলে সাড়া পাবে না। মুফতি ওয়াক্কাস সাহেব জোট প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেই বাস্তবতা এখন নেই। আর জামায়াতকে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছি না।
মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শহিদ ইকবাল হোসেন জানান, আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। আরও অনেকে মনোনয়ন চাইবে, দল যাকে মনোনীত করবে, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। নির্বাচন এলে বিভেদ থাকবে না।
দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপিকে ছাড়াই এবার এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। দলের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় নানা আয়োজনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের কাছে টানতে কাজ করছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাড. গাজী এনামুল হক। তিনি জানান, সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে কয়েক বছর ধরে সোচ্চার। ৫ আগস্টের পর প্রকাশ্যে আরও সোচ্চার হয়েছি। সাংবাদিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছি। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি। হিন্দু, মুসলিম, দলমতের ঊর্ধ্বে আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কিংবা অন্য দলের প্রার্থীকে এখানে চ্যালেঞ্জ মনে করছে না জামায়াত।
এসময়/