সমালোচনাকে ভয় নয়, সম্মানের চোখে দেখুন।
মোঃ শাহজাহান বাশার,
(সাংবাদিক ও কলামিস্টঃ)
সমালোচনা—শব্দটি অনেকের মনেই এক ধরনের নেতিবাচক প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে। আমরা বেশিরভাগই প্রশংসা পেতে আগ্রহী, কিন্তু কেউ আমাদের ভুল ধরলে কিংবা আমাদের কাজের সমালোচনা করলে তখন এক অদ্ভুত প্রতিরোধের দেয়াল তৈরি হয়ে যায় মনের ভেতর। অথচ ভাবলে অবাক হতে হয়—আমাদের সফলতার পথটিতে যদি কিছু আলোকবর্তিকা থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে সমালোচনা তাদের অন্যতম।
সমালোচনা যদি গঠনমূলক হয়, তাহলে সেটি একপ্রকার আশীর্বাদ। কারণ এতে আমরা নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে চিনতে পারি। মানুষের স্বভাবই এমন যে, অনেক সময় নিজের ত্রুটি নিজেই বুঝতে পারে না। একজন সচেতন সমালোচক যখন আমাদের সেই ত্রুটির কথা বলে দেয়, তখন সেটি আমাদের জন্য আয়নার মতো কাজ করে। আর আয়না কি কখনো মিথ্যে বলে?
আমরা যারা কোনো দায়িত্বশীল অবস্থানে আছি—হোক সেটা সাংবাদিকতা, সাহিত্য, রাজনীতি কিংবা শিক্ষা—তাদের জন্য সমালোচনা শুনে তা বিশ্লেষণ করা এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমালোচকদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ নয়, বরং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই বুদ্ধিমানের পরিচয়। কারণ তারাই আমাদের ভিত মজবুত করতে সাহায্য করেছেন।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি—সব সমালোচনাই যে সদুপদেশ তা নয়। কিন্তু সেটি যাচাই করার জন্য আমাদেরকে উন্মুক্ত মন নিয়ে শুনতে হবে। গঠনমূলক সমালোচনা আর কুৎসা এক নয়। গঠনমূলক সমালোচনায় থাকে দায়বদ্ধতা, থাকে উত্তরণের পথনির্দেশনা। কুৎসায় থাকে বিদ্বেষ, বিদ্রূপ, এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ।
তবে আমরা যদি প্রতিটি সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় ধৈর্য ধারণ করতে পারি, তাহলে সময়ের ব্যবধানে প্রকৃত সমালোচক আর কুৎসাকারী আলাদা হয়ে যাবে। যারা গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন, তারা আমাদের উন্নতির সাক্ষী হবেন। আর যারা অন্ধ বিদ্বেষে কথা বলেছে, তারাও একদিন নিজেরাই নিজেদের ভুল বুঝবেন—কিন্তু তাও তখনই সম্ভব হবে যদি আমরা তাদের প্রতি সম্মান বজায় রাখি।
এই কারণেই আমি বিশ্বাস করি—সমালোচনাকে ভয় নয়, বরং সম্মান করা উচিত। হিংসা নয়, বরং কৃতজ্ঞতা। এই সমালোচকরাই আমাদের স্বপ্ন সফল করতে চূড়ান্তভাবে সাহায্য করেছেন। তাঁদেরকে প্রশংসা করলেই হয়তো একদিন তাঁরা নিজেরাও বুঝবেন—তাঁদের বক্তব্যে কোথায় সীমাবদ্ধতা ছিল, কোথায় অনুপ্রেরণা ছিল।
আজকের সমাজে যখন অন্যের সাফল্যে ঈর্ষা করার প্রবণতা বাড়ছে, তখন আমাদের উচিত উল্টো পথে হাঁটা। সমালোচনাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে গড়ে তোলা, সমালোচকদেরকে সম্মানের আসনে বসানো এবং হৃদয়ের প্রশান্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
সর্বোপরি, সমালোচনার মধ্যে রয়েছে পরিশুদ্ধির শক্তি, আত্মোপলব্ধির সুযোগ এবং নীরব উন্নতির পথ। এই সত্য বুঝে যারা নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে জাগ্রত করতে পারে, তারাই প্রকৃত বিজয়ী।
লেখক পরিচিতি:
মোঃ শাহজাহান বাশার, দৈনিক জনতার মতামত এর সম্পাদক ও প্রকাশক, একাধিক জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকা ও পোর্টালের স্টাফ রিপোর্টার ও সাব-এডিটর।
তিনি ১ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা, প্রাইভেট কুরিয়ার সার্ভিস এবং ট্রান্সপোর্ট লজিস্টিকস খাতে অভিজ্ঞ। নিয়মিত কলাম লেখেন সমাজ, রাজনীতি ও নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে। ধর্মীয় ভাবেও লেখালেখি করে থাকেন।
এসময়/