ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জ্বলাবদ্ধতায় দিশেহারা ভবদহের শত গ্রামের মানুষ।

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 31, 2025 ইং
জ্বলাবদ্ধতায় দিশেহারা ভবদহের শত গ্রামের মানুষ। ছবির ক্যাপশন: জ্বলাবদ্ধতায় দিশেহারা ভবদহের শত গ্রামের মানুষ।
ad728
জ্বলাবদ্ধতায় দিশেহারা ভবদহের শত গ্রামের মানুষ। 

মালিকুজ্জামান কাকাঃ 

'দিনের পর মাস পেরিয়ে বছর যায়
মুক্তি নাই ভবদহের মানুষের হায় হায়
প্রকল্পে জাগে আশা, এবারো অসহায়
কিভাবে হতে পারে কার্যকর মুক্তি উপায়
অন্ধকারে বন্দী ওরা খুঁজছে যা হবে সহায়।' 

জলাবদ্ধতার অভিশাপ ঘুচলো না ভবদহ প্রভাবিত মানুষের। টানা বৃষ্টিতে যশোরের মনিরামপুর,অভয়নগর ও কেশবপুর উপজেলার শত গ্রামে পানি ঢুকেছে।এসব গ্রামের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি,ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভবদহ অঞ্চলের বিলগুলো ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। ভরাট সংকীর্ণ নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধ এসব বাড়ির লোকজনপরিবার নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। 

যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর,কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ওফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়েই ভবদহ অঞ্চল। এই এলাকার পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদীদিয়ে। পলি পড়ে নদী গুলো নাব্যতা হারিয়েছে আগেই। ফলে এসব নদী দিয়ে এখন কার্যকর পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এ কারণে বৃষ্টির পানি আটকা পড়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।টানা কয়েক দিন ধরে টানা বর্ষণে ভবদহ অঞ্চলের ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে। বিল উপচে পানি ঢুকতে শুরুকরেছে আশপাশের গ্রাম গুলোতে। 

মনিরামপুর উপজেলার লখাইডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ রীতা মণ্ডল (৪২) বলেন, ‘উঠোনে প্রায় হাঁটু জল। আর একটু বাড়লেই ঘরে উঠে যাবে। ঘরে জল উঠলে রাস্তায় উঠা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। 

সুজাতপুর গ্রামের নিমাই চক্রবর্তী ও হরিদাস বলেন, ‘আমার বাড়ির উঠোনে জল। প্রতিদিন তা বাড়ছে। আর একটু বৃষ্টি হলেই বাড়িঘর ছাড়তে হবে।’ 

বাজেকুলটিয়া গ্রামের অনিমেষ, গৌড় ও মুকুল চন্দ্র বিস্বাস বলেন, ‘এবার আগেই বাড়িতে জল এসেছে। উপরের জলের চাপে প্রতিদিন তা বাড়ছে। টিউবওয়েল,বাথরুম জলের তলে চলে গেছে। থাকার ঘরে পানি উঠার মতো অবস্থা হয়েছে। খুব খারাপ অবস্থায় আছি। 

উপজেলার পাঁচকাটিয়া গ্রামের নিতাই, হরিপদ ও বলাই বিস্বাস (৪৫)  বলেন, ‘বৃষ্টির সঙ্গে উপরের দিকের জল চাপ দেওয়ায় পানি বেড়েই চলেছে। উঠোনে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছি। ঘর থেকে সাঁকো দিয়ে বের হচ্ছি। জল আর একটু বাড়লে ঘরে ঢুকবে।’ একই গ্রামের ভগীরথ বিশ্বাস (৬০)বলেন, ‘খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। যেভাবে জল বাড়ছে, তাতে এবারও অন্যবারের মত জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেবে।’ 

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রামকমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালীর বাড়ির উঠোনে হাঁটু পানি। পানি ছুঁইছুঁই করছে তাঁর ঘরের বারান্দা। 
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির জল জমে ভবদহ এলাকা ডুবতে শুরু করেছে। ভবদহ অঞ্চলের এলাকার শত গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিতহচ্ছে। অনেকের বাড়িতে পানি। অনেক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। 
তিনি বলেন, ‘ভবদহের ২১-ভেন্ট স্লুইসগেটের মধ্যে মাত্র ছয়টি গেট খোলা হয়েছে। গেট দিয়ে বেশি জল নামছে। সবগুলো গেট খুলে দিলে আরও বেশি জল নামতো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সব গেট খুলছে না। এলাকারার বিলে টিআরএম-টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) চালু না করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই।’ 

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরেরনির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘নদীতে জোয়ারের সময় ভবদহ স্লুইস গেটের ২১-ভেন্টেরউপর চারটি বড় ও ১৫টি ছোট বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভাটির সময় ছয়টি গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। গেট গুলো দিয়ে প্রচুর পানি বের হচ্ছে। এতে এলাকার পানি দ্রুত সরেযাবে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘ভবদহ এলাকারপানি নিষ্কাশনের জন্য সেনাবাহিনী আগামী মাসে ছয়টি নদীর ৮১দশমিক ৫ কিলো মিটার খননকাজ শুরু করবে। এ ছাড়া আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুই-এক মাসের মধ্যে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের কাজ শুরু হবে।’

এসময়/ 

নিউজটি পোস্ট করেছেন : মোঃ মনিরুজ্জামান

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
নারায়ণগঞ্জে নারী ও অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার।

নারায়ণগঞ্জে নারী ও অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার।