ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভারতের বেআইনি বিতাড়ন নীতির শিকার শত শত বাঙালি মুসলিম: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 24, 2025 ইং
ভারতের বেআইনি বিতাড়ন নীতির শিকার শত শত বাঙালি মুসলিম: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ছবির ক্যাপশন: ভারতের বেআইনি বিতাড়ন নীতির শিকার শত শত বাঙালি মুসলিম।
ad728
ভারতের বেআইনি বিতাড়ন নীতির শিকার শত শত বাঙালি মুসলিম: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টারঃ 

নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে ভারতের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে। 

সংস্থাটির দাবি, ভারত সরকার বেআইনিভাবে শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলিমকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে, যেখানে এসব মানুষকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

বুধবার (২৩ জুলাই) প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের মে মাস থেকে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পরিচালিত সরকার এই বিতাড়নের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করেছে। 

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, সীমান্তবর্তী বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাঙালি মুসলিমদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমনকি যাঁরা প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক তাঁরাও এই প্রক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন।

বৈষম্য ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, “ভারত সরকারের এই তথাকথিত ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ ঠেকানোর প্রক্রিয়া ন্যূনতম মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার কোনো নমুনা দেখায় না। 
এটি একরকম জাতিগত বৈষম্য এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

সংস্থাটি আরও জানায়, জুন মাসে তারা অন্তত ৯টি ঘটনার অনুসন্ধান করেছে এবং ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের ১৮ জন সদস্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। 
এদের মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও রয়েছেন যাঁরা ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিতাড়িত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে নানা ঝুঁকি নিয়ে পুনরায় ভারতে প্রবেশ করেছেন।

ভারতের নীরবতা, বাংলাদেশের উদ্বেগ ,হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, গত ৮ জুলাই এ বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। 
ভারতের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো সরকারি বক্তব্য বা তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

তবে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি নিশ্চিত করেছে যে, ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে অন্তত ১,৫০০ মুসলিম পুরুষ, নারী ও শিশুকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। 
এর মধ্যে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন বলেও বিজিবি জানিয়েছে।

বিতাড়নের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে ,বিজিবি সূত্র জানায়, বিতাড়নের এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান। 
ভারতে অবস্থানকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। 
অভিযোগ রয়েছে, বেছে বেছে মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে, এবং নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 
এতে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দাবি ,বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। 

জাতিসংঘ, ওআইসি এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত ভারতের এই বিতাড়ন নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। 

এছাড়া বাংলাদেশ সরকারকেও কূটনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের এমন বেআইনি বিতাড়ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালার পরিপন্থী। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদন শুধু একটি উদ্বেগজনক সতর্কবার্তা নয়, বরং ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজনের ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতেরও পূর্বাভাস। 

এখন সময়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভারতের এমন কার্যকলাপ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

এসময়/ 

নিউজটি পোস্ট করেছেন : মোঃ মনিরুজ্জামান

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
বেনাপোল সীমান্তে মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্প পরিদর্শনে স্বরাষ

বেনাপোল সীমান্তে মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্প পরিদর্শনে স্বরাষ