নড়াইলের ভওয়াখালী সরকারি স্কুল মাঠটি ৭ মাস জলাবদ্ধ থাকে।
নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইল পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভওয়াখালী সরকারি স্কুলের দু’টি ভবন রয়েছে। উত্তর পাশের ভবনটিতে ৩য়,৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ক্লাস হয়। এ ছাড়া এই ভবনটিতে স্কুলের শিক্ষক মিলনায়তন ও অফিস কক্ষ রয়েছে।
দক্ষিণ পাশের ভবনটিতে শিশু শ্রেণি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস হয়। এ দু’টি ভবনের দূরত্ব এক’শ মিটারের বেশি। সামান্য বৃষ্টিতে মাঠের মধ্যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে স্কুলের মাঠে এখন হাটু পনি।
শুধু তাই নয় দু’টি ভবনের বারান্দায় পানি উঠে গেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট স্বীকার করে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এ দুরাবস্থা এবং মাঠের জলাবদ্ধতা শুধু এখন নয় বছরের প্রায় ৭ মাস এ মাঠে জলাব্ধতা থাকে। ফলে এখানকার কয়েক’শ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ব্যাহত হচ্ছে।
ভওয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর জাহানের ভাষ্য ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলটির এ সমস্যা প্রথম থেকেই। শহরের কুরিগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার পানি এই মাঠ দিয়ে নামে। দীর্ঘ বছরে এ সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসেনি।
এ স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী দৃষ্টি বিশ্বাস জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে স্কুলে যাচ্ছি না। কারণ স্কুলে যাবার পথে মাঠে ও আশেপাশে পানি থাকায় স্কুলে অনেক ঘুরে যেতে হয়। তাই কয়েক দিন স্কুলে যাচ্ছি না।
স্কুলের ৫ম শেণির শিক্ষার্থী উমামা নাজ হিৃদিতা,মালিহা তাবাচ্ছুম ও তানহা জারিন জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তাদের ড্রেস ভিজে যায়। জুতা পরে ফুল ড্রেসে আসতে পারি না। অনেক সময় ড্রেনে পড়ে যাই।
দৈনিক সমাবেশ করতে পানি না, টিফিনের সময় মাঠে খেলাধুলা করতে পারিনা। এ ছাড়া দক্ষিন পাশের ভবনে ক্লাস না হওয়ায় একই শেণি পক্ষে দু’টি শাখা বা দু’টি শ্রেণির ক্লাস নেওয়ায় ক্লাস কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক গোলক চন্দ্র বিশ্বাস, ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম, মোঃ শাকিল জানান ও রওশন আরা বলেন, বলেন, ছোট বেলা থেকে দেখছি শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার পানি এই মাঠ এসে জমা হয়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে মাঠে পানি জমে যায়।
পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪ বছর আগে মাঠের পাশ দিয়ে এক ফুটের মতো একটি ড্রেন করা হয়েছে। কিন্তু, অধিকাংশ সময় ময়লাতে ভরে থাকে। আগের মেয়র এখানে একটি ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জায়গা না ছাড়ায় এখানে বড়ো কোন ড্রেন হয়নি।
তারা জানান, ইতিমধ্যে এ এলাকার অনেক বাড়ির ভেতরে পানি উঠে গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর জাহান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলে দক্ষিণ পাশের ভবনটিতে শিক্ষকরা যেতে পারেন না। ফলে সাড়ে ৪ শ শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি ভবনের মধ্যেই ক্লাস নিতে হয়। বিভিন্ন এলাকার ময়লা পানি এই মাঠে মাঠে এসে জমা হওয়ায় পানির দূর্গন্ধে আমরা বসতে পানি না। ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে না।
এখানকার পানি নিষ্কাশনে এবং মাঠ উঁচু করার জন্য এর আগের মেয়রকে অবগত করেছিলাম। বিষয়টি বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি। ড্রেন নির্মাণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে নড়াইল পৌরসভার প্রশাসক বরাবর একটি দরখাস্ত প্রস্তুত করেছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ২ মাস আগে জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহানকে স্কুলের এই জলাবদ্ধতার কথা জানিয়েছি। তিনি ভওয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
নড়াইল পৌরসভার নব নিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিমকে নতুন ড্রেন নির্মাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নতুন ড্রেন নির্মাণে বর্তমানে কোন ফান্ড নেই। তবে ফ্রান্সের অর্থায়নে সেভেন টাউন প্রজেক্টের আওতায় সারা দেশের ৭ টি বড়ো পৌরসভার মধ্যে নড়াইল পৌরসভা রয়েছে।
ইতিমধ্যে সরেজমিন কয়েকবার সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। এর সম্ভাব্য বাস্তবায়নকাল শুরু হবে আগামি ২০২৬ সাল থেকে।
আশা করছি এই মেঘা প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এসব ড্রেনেজ ব্যবস্থার মোটামুটি সমাধান হবে।
এসময়/