ছিনাইয়া যুব সমাজের অভিযানে ৩০ কেজি গাঁজাসহ ৩ মাদক কারবারি আটক।
মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের ছিনাইয়া ও আংশিক আনন্দপুর এলাকার তরুণ সমাজ।
ছিনাইয়া যুব সমাজের উদ্যোগে পরিচালিত এক সাহসী মাদকবিরোধী অভিযানে প্রায় ৩০ কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে, যাদের একজন পুরুষ ও দুজন নারী।
প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উত্তর আনন্দপুর গ্রামের হাবুল মিয়ার ছেলে জেনারুল। তার সাথে আটক হওয়া দুই নারী মাদক প্রচারককেও স্থানীয়রা ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেন।
বেশ কিছুদিন ধরে এলাকার সচেতন যুবকরা লক্ষ্য করছিলেন, আনন্দপুর-ছিনাইয়া সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় মাদকের গোপন কারবার চালানো হচ্ছে। দিনের পর দিন মাদক সেবন ও বিক্রির কারণে এলাকার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছিল। যুব সমাজের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গোপনে নজরদারি শুরু করেন।
অবশেষে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় ছিনাইয়া যুব সমাজ একটি সুপরিকল্পিত অভিযানে নামেন। সন্দেহজনক এক জায়গায় হঠাৎ অভিযান চালিয়ে গাঁজার বড় একটি চালানসহ মাদক বিক্রেতাদের আটক করেন তারা।
অভিযানের সময় স্থানীয় জনগণও তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জোগান এবং আটককৃতদের পুলিশের হাতে তুলে দিতে সহযোগিতা করেন।
খবর পেয়ে বুড়িচং থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটক তিন মাদক কারবারি ও গাঁজা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “যুব সমাজের এমন সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতা প্রশংসার দাবিদার। তারা আমাদের বড় সহায়ক শক্তি।
মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে, তবে এ ধরনের সামাজিক উদ্যোগ আমাদের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে তোলে।”
এই অভিযান এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকে প্রকাশ্যে জানান, “আমরা এতদিন শুধু অভিযোগ শুনে চুপ ছিলাম।
কিন্তু আজ আমাদের ছেলেরা প্রমাণ করে দিয়েছে তারা যদি চায়, সমাজকে রক্ষা করতে পারে। মাদক সমাজ ধ্বংস করে দিচ্ছে। ছিনাইয়ার যুব সমাজ যেন এমন আরও পদক্ষেপ নিতে পারে, আমরা সবাই তাদের পাশে থাকব।”
ছিনাইয়া যুব সমাজের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনাকারী এক সদস্য বলেন, “আমরা কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে কিছু করিনি। সমাজে যারা বিষ ঢালছে, তাদের আমরা প্রতিহত করতে চাই।
এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা চাই আমাদের এলাকা হোক নিরাপদ, সুস্থ, শান্তিপূর্ণ। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভবিষ্যতেও মাদকের বিরুদ্ধে আরও বড় অভিযান পরিচালনা করব।”
এই ঘটনা শুধু একটি সফল অভিযান নয়, বরং এটি একটি সামাজিক বিপ্লবের সূচনা। যেখানে তরুণ সমাজ নিজ উদ্যোগে, কোনো লোভ বা প্রতিদান ছাড়া, সমাজের কল্যাণে কাজ করছে সেটা নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এ ধরনের সচেতন যুব শক্তিই পারে মাদক, সন্ত্রাস ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে।
সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, “যুব সমাজ জেগে উঠলে সমাজ বদলাতেই হবে। ছিনাইয়ার এই উদাহরণ যেন সারাদেশের তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।”
এসময়/