বেরোবির সাবেক উপাচার্য কলিমুল্লাহ গ্রেফতার।
মো. শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টারঃ
ঢাকা: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) তাকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় শিক্ষা মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতারের পর ড. কলিমুল্লাহকে রাজধানীর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়েছে হেফাজতে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ডিবি বলছে, একাধিক গুরুতর অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মতো অভিযোগ রয়েছে বলে আভাস মিলেছে।
গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে খুব শিগগির একটি প্রেস ব্রিফিং করবো। সেখানে বিস্তারিত জানানো হবে, কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে।”
উল্লেখ্য, ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ তার উপাচার্য মেয়াদকালে বারবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচিত ছিলেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং শিক্ষার মান অবনতির অভিযোগ এনে একাধিকবার আন্দোলনে নেমেছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“কলিমুল্লাহ স্যারের সময় বেরোবি ছিল কার্যত প্রশাসনিক অচলাবস্থায়। নিয়োগ নিয়ে এত বড় দুর্নীতি হয়েছিল যে, সেই সময় তদন্ত হলেও অনেক কিছু বেরিয়ে আসত। আজ যদি গ্রেফতার হয়ে থাকেন, তাহলে এটা দেরিতে হলেও ন্যায়ের জয়।”
ড. কলিমুল্লাহ তার ‘জনআলোচনা কেন্দ্র’ নামক বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে প্রায়শই বিতর্কিত রাজনৈতিক ও সামাজিক বক্তব্য দিয়ে সংবাদমাধ্যমে থাকতেন। অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত প্রচারণা ও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিলেন।
বেরোবির বর্তমান একাধিক শিক্ষক কলিমুল্লাহর গ্রেফতারে স্বস্তির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এক অধ্যাপক বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয়কে যারা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি হওয়া দরকার। তার গ্রেফতার শিক্ষাক্ষেত্রে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হলে আমরা স্বাগত জানাবো।”
কলিমুল্লাহর পরিবারের পক্ষ থেকে কিংবা তার আইনজীবীদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে সেটি সংবাদে হালনাগাদ করা হবে।
ড. কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বহুদিন ধরেই প্রচারিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এতদিন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তার এই গ্রেফতার একদিকে যেমন প্রশাসনিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে একে কেউ কেউ দেখছেন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিপক্ষ দমন বলেও।
এই গ্রেফতার কোনো বড় দুর্নীতির জাল উন্মোচনের প্রথম ধাপ, না কি কেবল আইনি কৌশলের অংশ—এমন প্রশ্ন এখন সমাজে ঘুরপাক খাচ্ছে।
ডিবি’র প্রেস ব্রিফিং ও মামলার বিস্তারিত পেলে প্রতিবেদন হালনাগাদ করা হবে।
এসময়/