ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জামায়াত ইসলামীর রাজনৈতিক উত্থান।

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 20, 2025 ইং
জামায়াত ইসলামীর রাজনৈতিক উত্থান। ছবির ক্যাপশন: ১৯ জুলাই জামায়াত ইসলামীর মহা সমাবেশ।
ad728
জামায়াত ইসলামীর রাজনৈতিক উত্থান।

আবু নাসের মহিউদ্দিন, কুয়েত প্রতিনিধিঃ 

বাংলাদেশে জামায়াত ইসলামীর গণতান্ত্রিক উত্থান ও বিকাশ ধীরে হলেও ধাপে ধাপে হয়েছে, গত পাঁচ দশকজুড়ে অসংখ্য প্রতিকূলতা ও নিঃশব্দ নিপীড়নের মধ্য দিয়ে তাদের পথচলা। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের শীর্ষ নেতারা হাসিমুখে জীবন দিয়েছেন, কিন্তু কখনোই তাদের বিশ্বাস ও আদর্শে আপস করেননি। তাদেরকে সবসময় আন্তরিক ও উদ্দেশ্যনিষ্ঠ দেখা গেছে, এবং তারা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, যখন ইসলামী ছাত্র সংগ্রামের ছাত্রনেতা আব্দুল মালেককে কোনো কারণ ছাড়াই -এ পল্টন এলাকায় ছাত্রলীগ নির্মমভাবে হত্যা করে—এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর অধ্যায়। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নেতা ও এমপি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ছাত্রলীগ কর্তৃক পাথর ছুঁড়ে আহত করার ঘটনাও একই নিষ্ঠুরতার সাক্ষ্য বহন করে। বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে জামায়াত কর্মীদের হত্যা ও মৃতদেহের উপর নৃত্য এই বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে, এ সব ঘটনা তাদের অতীতের ত্যাগের প্রতীক এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।

গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জামায়াতে ইসলামীর বিশাল সমাবেশটি বাংলাদেশে তাদের রাজনৈতিক উত্থানের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি তাদের দীর্ঘদিনের নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের ফসল। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের এই নিরলস প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কোনো পরিশ্রম বৃথা যায় না এই কথা আবারও প্রমাণিত হলো। জীবনের প্রতিটি সফলতার পেছনেই থাকে কিছু অদৃশ্য গল্প—রাজনীতির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।

রাজনৈতিক সাফল্য নির্ভর করে দলের মিশন, অঙ্গীকার ও নেতৃত্বের যোগ্যতার উপর। সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ নিতে পারলে রাজনৈতিক সফলতা অর্জন সহজ হয়। শেখ মুজিব একজন উজ্জ্বল উদাহরণ। সাম্প্রতিক ইতিহাসে জিয়াউর রহমানকে সবচেয়ে সফল নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্ব তাকে বাংলাদেশের একজন মহান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বিএনপির প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে আজও জীবন্ত রেখেছেন। বিএনপির রাজনীতি আজও মূলত জিয়াউর রহমানের দর্শন ও বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক মনোভাবের উপর নির্ভর করে। বিএনপির উচিত জিয়া ও খালেদা জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করা।

আজকের জামায়াতের সাফল্যের পেছনে আছে তাদের নেতৃত্বের শক্ত ভিত্তি, যা বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে আলাদা। এটি নিঃসন্দেহে একটি নেতৃত্ব গড়ার প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে তারা আবারও তাদের নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের নেতৃত্বের দক্ষতা দেখে বিস্মিত। আবু সাঈদ, যিনি প্রথম শহীদ হন, ছিলেন ছাত্রশিবিরের একজন নেতা। জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—যদি সময় আসে, তারা তাদের শীর্ষ নেতাদের বিচারিক হত্যার বদলা নেবেন। জুলাই বিপ্লব সেই সুযোগ এনে দিয়েছিল এবং তারা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। কিন্তু বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মতো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে।

বিপ্লব পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ জনগণের কল্যাণে নিবেদিত রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। দলীয় শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের মধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় ছিল সুসংহত। চাঁদাবাজি বা অন্যায় সুবিধা আদায়ের বড় কোনো ঘটনা তেমনভাবে দেখা যায়নি। অন্যদিকে বিএনপি এখনও তৃণমূল পর্যায়ে শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ। যদিও তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব শৃঙ্খলা আনার জন্য নিরলস চেষ্টা করছে এবং ইতোমধ্যে কয়েক হাজার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

যেখানে উত্থান আছে, সেখানে পতনও থাকে—এ কথা রাজনীতির জন্য সবসময় মাথায় রাখা উচিত। গতকালের সমাবেশে আমরা যে সাফল্যের চিত্র দেখেছি, তা নিঃসন্দেহে জামায়াতের রাজনৈতিক উত্থানকে নির্দেশ করে, কিন্তু এটি স্থায়ী নয় এবং যেকোনো সময় দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই এই অর্জন ধরে রাখতে হলে অবশ্যই সততা, ধৈর্য ও পরিপক্বতা প্রয়োজন। সাফল্যের অহংকার ও আবেগ যেন সর্বনাশ না ডেকে আনে।

জামায়াত কখনো ভুলে যাবে না যে, তাদের রাজনৈতিক যাত্রার প্রারম্ভে ৭০ এর দশকের শেষদিকে জিয়াউর রহমানের সমর্থন ছিল। তাদের উত্থানে বেগম খালেদা জিয়ার অবদানও কম নয়। সাম্প্রতিক অতীতে এই দুই দল পারস্পরিক সহযোগিতা করেছে। যদিও তারা বর্তমানে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, তবুও কোনো দলই যেন এখন রাজনৈতিক সংঘাত বা সংঘর্ষে না জড়ায়—এটাই জাতির প্রত্যাশা।

আমরা সাধারণ জনগণ চাই একটি সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও সংঘর্ষ নয়। রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আসা দরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে উঠতে হবে, যেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়, আগামী সমৃদ্ধির বাংলাদেশের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করতে জামায়াতে ইসলামী।

এসময়/ 

নিউজটি পোস্ট করেছেন : মোঃ মনিরুজ্জামান

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
ঝিকরগাছায় বসত বাড়ির সামনে সরকারী কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ার অভ

ঝিকরগাছায় বসত বাড়ির সামনে সরকারী কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ার অভ