ঢাকা | বঙ্গাব্দ

মাছের পিটুইটারি গ্লান্ড ‘সোনার খনি’।

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Aug 26, 2025 ইং
মাছের পিটুইটারি গ্লান্ড ‘সোনার খনি’। ছবির ক্যাপশন: মাছের পিটুইটারি গ্লান্ড ‘সোনার খনি’।
ad728
উদ্যোক্তা বিএম নেওয়াজ শরীফ চৌগাছায় মাছেরপিটুইটারি গ্লান্ড  ‘সোনার খনি’। 

মালিকুজ্জামান কাকাঃ

যশোরের চৌগাছা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা বিএম নেওয়াজ শরীফ মাছের মাথার ভেতরে থাকা পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছেন। মাছের প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই গ্লান্ডকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন “মৎস্য খাতের সোনার খনি। মাছের মাথায় ‘সোনার খনি’, লাখ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।

আগে মাছ কাটার পর মাথার ভেতরের ছোট্ট অংশটি ফেলে দেওয়া হতো অবহেলায়। অথচ সেই অংশই আজ পরিচিতি পাচ্ছে ‘সোনার খনি’ নামে। মাছের মস্তিষ্কের পাশে থাকা ক্ষুদ্র গ্রন্থি পিটুইটারি গ্লান্ড, যা মাছের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায় এবং হরমোন উৎপাদনে অপরিহার্য। এই গ্লান্ড এখন লাখ টাকার ব্যবসা দিচ্ছে। যশোরের চৌগাছার তরুণ উদ্যোক্তা বিএম নেওয়াজ শরীফ তা করে দেখিয়েছেন।

ফেলে দেওয়া অংশ কোটি টাকার সম্পদ রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙাস, শিং, মাগুর, বোয়াল—এসব মাছের মাথার ভেতরে থাকে এই পিটুইটারি গ্লান্ড। মাছ কাটার সময় যা সাধারণত নষ্ট হয়ে যেত, সেটিই  প্রক্রিয়াজাতকরণের পর হয়ে উঠছে কোটি টাকার সমমূল্যের সম্পদ। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এক কেজি গ্লান্ডে থাকে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ পিস। এর বাজারমূল্য এক কোটি টাকার বেশি। হ্যাচারি, ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা ও অ্যাকুয়া টেক শিল্পে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

নেওয়াজ শরীফের পথচলা: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৎস্য বিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষে নেওয়াজ শুরু করেন নতুন এক যাত্রা। 
তিনি ফুলসারা ইউনিয়নের নিমতলায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জেএসএল এগ্রো ফিসারিজ’ নামে ল্যাবরেটরি। স্থানীয় মাছবাজার থেকে বটিওয়ালাদের (যারা মাছ কাটেন) কাছ থেকে গ্লান্ড সংগ্রহ করে সেখানে সংশোধন ও সংরক্ষণ করা হয়। এরপর সেগুলো বিক্রি করা হয় দেশের বিভিন্ন হ্যাচারিতে।

নেওয়াজ শরীফ জানান, শুরুতে ৬-৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন প্রতি মাসে প্রায় অর্ধলাখ টাকা লাভ হচ্ছে। সবে শুরু। সামনে বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা আছে।

দেশীয় চাহিদা ও রপ্তানির সম্ভাবনাঃ বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৯৬৪টি নিবন্ধিত হ্যাচারি রয়েছে। এ হ্যাচারি গুলোয় বছরে ৩৫-৪০ কেজি হরমোনের প্রয়োজন হয়, যা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। নেওয়াজের বিশ্বাস, দেশীয়ভাবে উৎপাদন শুরু হলে শুধু আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমবে না, বরং অতিরিক্ত হরমোন বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।
নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিঃ এই উদ্যোগে উপকৃত হচ্ছেন বাজারের বটিওয়ালারা। যশোর বড়বাজারের বটিওয়ালা খানজাহান আলী বলেন, একটি মাছের মাথা থেকে দুই পিস গ্লান্ড পাওয়া যায়। প্রতিটি ৪ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হয়। এতে আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে।

পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএফ) ও শিশু নিলয় ফাউন্ডেশন এই খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ২৫ জন বটিওয়ালাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে দেশের প্রতিটি বাজারে গ্লান্ড সংগ্রহ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

সরকারি সহায়তার প্রতিশ্রুতিঃ চৌগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, পিটুইটারি গ্লান্ড আমদানি কমানো গেলে দেশের মৎস্যখাত উপকৃত হবে। আমরা ইতোমধ্যে নেওয়াজ শরীফের ল্যাব পরিদর্শন করেছি। সরকারি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

একসময় অবহেলায় ফেলে দেওয়া মাছের মাথার অংশ এখন সম্পদের ভান্ডার। সেই ভান্ডার থেকে দেশের মৎস্য খাতে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছেন তরুণ নেওয়াজ শরীফ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক উদ্যোগ ও নীতিগত সহায়তা পেলে পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ মৎস্য খাতে নতুন বিপ্লব ঘটাবে।

সরকারি সহায়তাঃ চৌগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, পিটুইটারি গ্লান্ড আমদানি কমাতে পারলে দেশের মৎস্যখাত উপকৃত হবে। আমরা ইতোমধ্যে নেওয়াজের ল্যাব পরিদর্শন করেছি এবং সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছি।

একসময় ফেলে দেওয়া মাছের মাথার অংশ আজ হয়ে উঠেছে কোটি টাকার সম্পদ। যশোরের তরুণ নেওয়াজ শরীফের উদ্যোগ শুধু স্থানীয় অর্থনীতিতে নয়, জাতীয় পর্যায়ে মৎস্য খাতে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।

পিটুইটারি গ্লান্ড কি? 
এটি মাছের মাথার ছোট গ্রন্থি, যা হরমোন নিঃসরণ করে মাছের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পিটুইটারি গ্লান্ড এক ধরনের ছোট গ্রন্থি, যা শরীরের বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থিটি মাছের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বছরে মাছকে একাধিকবার ডিম ছাড়ার সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।

পিটুইটারি গ্লান্ড কোথায় পাওয়া যায়? 
রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙাস, শিং, মাগুর, বোয়ালসহ কার্প জাতীয় মাছের মাথার পেছনের অংশে থাকে।

পিটুইটারি গ্লান্ডের বাজার মূল্যঃ 

প্রক্রিয়াজাতকরণের পর এক কেজির দাম কোটি টাকার বেশি হতে পারে।

এটি কীভাবে ব্যবহার করা হয়? 
হরমোন উৎপাদন, কৃত্রিম প্রজনন ও হ্যাচারি শিল্পে ব্যবহার করা হয়।

দেশীয় উৎপাদন কতটা সম্ভব? 
দেশে হ্যাচারি ও মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে সহজেই উৎপাদন করা সম্ভব, যা আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাবে। সাধারণ মানুষ বা মাছ কাটার শ্রমিকরা উপকৃত হতে পারে। 

বটিওয়ালারা পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করতে পারবে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও দক্ষ হতে পারবে।


নিউজটি পোস্ট করেছেন : মোঃ মনিরুজ্জামান

কমেন্ট বক্স