নিষিদ্ধ বালাইনাশক ব্যাবহারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানিকগঞ্জের কৃষক।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
মানিকগঞ্জ থেকে মো. নজরুল ইসলামঃ
মানিকগঞ্জে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ক মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানমূলক গবেষণা সমীক্ষা শীর্ষক এক সাংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৭ আগষ্ট, বৃহস্পতিবার সকালে শহরের শহীদ রফিক সড়কে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব হলরুমে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ) মানিকগঞ্জ।
সংস্থাটি গত দুই মাস ধরে মানিকগঞ্জ সদর,ঘিওর,হরিরামপুর ও সিংগাইর এলাকা থেকে ২১ জন কৃষকের ওপর নির্দিষ্ট প্রশ্নমালার আলোকে সমীক্ষা পরিচালনা করে। উপরোক্ত কর্মসূচিতে গবেষণাপত্র পাঠ করেন গবেষণা সহকারি গাজী নাফিউর রহমান হিমেল। বারসিক সভাপতি অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে ও বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল চন্দ্র রায়ের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরে কীটনাশক নিয়ে কৃষকরা কি ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়েন এবং পরিবেশের ক্ষতিকর দিক নিয়ে ব্যাখ্যা প্রদান বারসিক কর্মসূচি সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান।
সাংবাদিকদের অবগতির জন্য বারসিক কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন-নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকদের ক্যান্সারসহ নানা ঝুঁকির তথ্য আমরা পাই। অন্যায়ভাবে নিষিদ্ধ কীটনাশক ভিন্ন নামে বিক্রির বিষয়টিও পরিলক্ষিত হয়।
গবেষণা সমীক্ষায় ৪টি উপজেলা থেকে ২১ জন কৃষকের মধ্যে ১৮ জনকেইা প্রায় একইভাবে পাওয়া গেছে নানা রোগে আক্রান্ত। তাঁরা গত কয়েক বছরে বিভিন্নভাবে আক্রান্ত ও ক্ষতির শিকার হয়েছেন। যেমন- মানিকগঞ্জে ২১ জন কৃষকের প্রাপ্ততথ্য থেকে ব্যবহৃত কীটনাশকের উপরোক্ত তালিকা থেকে কার্বোফুরান, প্যারাকোয়াট, গ্লাইফোসেট, এলুমিনিয়াম ফসফাইড এই ৪ টি কীটনাশক সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ) হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষকরা বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে অধিক ক্ষতিকর কীটনাশক ক্রয় করছেন। এক মৌসুমেই কীটনাশক ক্রয় বাবদ সম্ভব্য তাদের ব্যয়= ২৬,৭৫৭/- টাকা। জমিতে ব্যাবহারে সরাসরি কোন মানুষ মারা যায়নি তবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঘরোয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থতার খবর জানা গেছে। এগুলো ব্যাবহারে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। এছাড়াও তাদের ১০ টি গরু, ১১টি হাস ও ১টি পুকুরের মাছ মারা যায়। এতে আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি= ১১,৮৮,৫০০/- টাকা।
আমরা কেবল ২১ জনের সমীক্ষা থেকে সিংগাইর রাজনগর এলাকায় ৫০ বিঘা জমিসহ মোট ৮৭ বিঘা জমিতে অধিক বিপজ্জনক কীটনাশক ব্যাবহারের খবর জানতে পেরেছি।
এছাড়াও ভুক্তভোগী কৃষকদের মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, বিভ্রান্তি, উচ্চরক্তচাপ, বিষন্নতা, উদ্বেগ, খাবারের অরুচি, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, অজ্ঞান হওয়া, স্নায়ু, দুর্বলতা, ত্বকের রোগ, ঘুম কম হওয়া, পা ভারী হয়ে যাওয়া ও বুক ব্যাথাসহ অনেক সমস্যার কথা জানা যায়। ঘরোয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে যাওয়াতে বড় ডাক্তার বা হাসপাতালে যেতে হয়নি। তারপরও তাদের তথ্যমতে প্রাথমিক চিকিৎসাবাবদ ব্যায় হয়েছে প্রায় ১১,০০০/।
আলোচকরা আরো বলেন, এইসকল সমস্যার অন্যতম কারণ কৃষকদের অসচেতনতা, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার, বাজারজাত করণ, সংরক্ষণ, বিক্রিতে মনিটরিং না থাকা, কিভাবে ব্যাবহার করতে হয় তা না জানা কৃষি বিভাগ, বিপনন কেন্দ্র সহ কৃষকদের মাঝে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে এগুলো নিয়ে পরিবেশবিদসহ কৃষি বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানানো হয়। এছাড়াও অর্গানিক কৃষিসহ কৃষি প্রতিবেশ চর্চা বৃদ্ধিতে সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা বাড়ানোর সুপারিশ উঠে আসে। এসময় জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময়/